এত আয়োজনের মধ্যেও প্রশ্নফাঁস
া আইসিটির দুই সেট প্রশ্নই ফাঁস! া ১ ঘণ্টা ইণ্টারনেটের গতি হ্রাসের নির্দেশ া আইসিটি পরীক্ষার আগে ৩০ মিনিট নেট বন্ধ া ‘দুষ্টু লোকেরা প্রশ্ন ফাঁস করে’ া সারাদেশে আটক ৩৪
তরিকুল ইসলাম সুমন, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার, সুশান্ত সাহা : সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র একের পর এক ফাঁস করা হচ্ছে। পরবর্তীতে যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রশ্নফাঁসে জড়িত অভিযোগে এ পর্যন্ত ৩৪ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গতকাল অনুষ্ঠিত আইসিটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু তার আগেই সকাল ৮টা ৫১মিনিটে প্রশ্নফাঁস করা হয়। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৭টি পরীক্ষার প্রশ্নই ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে।
আইসিটির দুই সেট প্রশ্নই ফাঁস : আইসিটি বিষয়ের প্রশ্ন গতকাল সকাল ৮টা ৫১ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে আইসিটির ‘ক সেট, সকাল ৯টা ৩ মিনিটে ‘গ সেট’ প্রশ্নও ফাঁস হয়। পরীক্ষার প্রশ্ন পরীক্ষা শেষে এই দুই সেট প্রশ্নের সঙ্গে মিলিয়ে ফাঁস হওয়া সেটের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে গঠিত কমিটি কাজ করছে।
মোবাইল ফোনে কমছে নেটের গতি : সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রশ্নফাঁস রোধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) পরীক্ষার দিন সকালে সব মোবাইল ফোন অপারেটরকে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সারাদেশে ইন্টারনেটের গতি কমানোর জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী আজ থেকে এটি কার্যকর করা হবে।
‘কেন্দ্র থেকে হলে নেয়ার পথে দুষ্টু লোকেরা প্রশ্ন ফাঁস করে’ : কেন্দ্র থেকে পরীক্ষার হলে যাওয়ার সময়টাতে অসাধু কেউ এসব প্রশ্নের ছবি তুলে ফাঁস করে বলে দাবি করেছেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন। তিনি আরো বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় এটা ঠিক। তবে এটা হয় পরীক্ষা শুরুর ঠিক ১৫-৩০ মিনিট পূর্বে। কেন্দ্রে প্যাকেট খোলার পর হলে নেওয়ার পথে পথে দুষ্টু লোকেরা গোপনে মোবাইল বা অন্য কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নের স্ক্রিন শট নিয়ে ফেসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
সারা দেশে আটক ৩৩ : সারাদেশে ধারাবাহিকভাবে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় গ্রেফতার করা হয়েছে ১৯ জন। এছাড়াও অন্য জায়গায় ১৯ জনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকও রয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহে আটজন, গোপালগঞ্জে তিনজন, নওগাঁয় পাঁচজন, টাঙ্গাইলে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, শনিবার দিনভর অভিযান চালিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগ ১৪ জনকে গ্রেফতার করে। এরা হলেন- রাহাত ইসলাম, সালাহউদ্দিন, সুজন, জাহিদ হোসেন, সুফল রায় ওরফে শাওন, আল-আমিন, সাইদুল ইসলাম, আবির ইসলাম নোমান, আমান উল্লাহ, বরকত উল্লাহ, আহসান উল্লাহ, শাহাদাত হোসেন ওরফে স্বপন, ফাহিম ইসলাম ও তাহসিব রহমান। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রশ্নফাঁসের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ডিভাইসসহ মোট ২৩টি মোবাইল সেট ও নগদ ২ লাখ ২ হাজার ৪শ টাকা উদ্ধার করা হয়।
আমাদের প্রতিনিধি মাহমুদুল হাসান রতন ময়মনসিংহ থেকে জনান, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে তিনজন পরীক্ষার্থী ও পাঁচজন অভিভাবক রয়েছেন। গ্রেফতারকৃরা হলেন- দাপুনিয়া কাওয়ালটি ইসলামিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী খাইরুল ইসলাম (১৬), জাকারিয়া (১৬) ও ফজলে রাব্বি (১৬) এবং অভিভাবক ইসরাত জাহান।
গোপালগঞ্জ থেকে এস এম সাব্বির জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেফতারকৃতরা হলেন- প্রাইভেট শিক্ষক মো. সালাউদ্দিন (৩৫), পরীক্ষার্থী মেহেদী শেখ (১৬) ও ফেরদাউস বিশ্বাস (১৬)।
নওগাঁ থেকে আশরাফুল নয়ন জানান, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে দুই শিক্ষকসহ পাঁচ ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা হলেন- রমজান আলীর ছেলে রেসিডেনশিয়াল কোচিং সেন্টারের শিক্ষক আল মামুন (২৯), মৃত আবুল কাশেমের ছেলে আশির্বাদ কোচিং সেন্টারের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন (৩০), ইমতিয়াজের ছেলে জাহিদ হাসান ইমন (১৬), নারায়ন চন্দ্রের ছেলে প্রভাত কুমার মহন্ত (১৬), হবিবর রহমানের ছেলে মর্তুজা আহমেদ (১৬)। এদের সকলের বাড়ি পতœীতলা উপজেলায়। ধামইরহাট উপজেলার মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে জরুহুল ইসলাম শাহিদ (১৭) এবং জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার হাস্তাপাড়া গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে ইসরাফিল আলম (১৬)।
টাঙ্গাইল থেকে অলক কুমার দাস জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে বাবুল হোসেন (২৫) নামের এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সাতটি প্রশ্নই ফাঁস : ১ ফেব্রুয়ারি বাংলা প্রথমপত্রের বহুনির্বাচনি পরীক্ষার ‘খ’ সেট, ৩ ফেব্রুয়ারি সকালে পরীক্ষা শুরুর প্রায় ঘণ্টাখানেক আগে বাংলা দ্বিতীয় পত্রের নৈর্ব্যক্তিক (বহুনির্বাচনি) ‘খ’ সেট, ৫ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা শুরুর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে সকাল ৮টা ৪ মিনিটে ইংরেজি প্রথমপত্রের ‘ক’ সেটের প্রশ্নফাঁস হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি বুধবার সকাল ৯টা ১২ মিনিটে ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের ‘খ’ সেটের গাঁদা, ৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার বহুনির্বাচনি অভীক্ষার ‘খ’ সেটের চাঁপা, ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে গণিতের ‘খ-চাঁপা’ সেটের প্রশ্নপত্রটি পাওয়া যায়, যা অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে।
উল্লেখ্য, গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে এবং বিদেশের কয়েকটি কেন্দ্রে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এতে ২০ লাখ ৩১ হাজার ৮৯৯ জন শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ছে আর শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই তা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পেয়ে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সাতটি পরীক্ষার প্রশ্নই পরীক্ষার শুরুর ৪০ থেকে ৬০ মিনিট আগেই ফাঁস হচ্ছে। সম্পাদনা : ইকবাল খান