সাক্ষাৎকারে শ্রমিকনেতা রাজেকুজ্জামান পোশাক শিল্পে বিদ্যমান শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পদের সুষম বণ্টনের পথে বাধা
জাফর আহমদ: দেশের শিল্প খাত বড় হলেও শ্রমিকদের অধিকারগুলো দিন দিন খর্ব হচ্ছে। শ্রমিক হিসেবে তার ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার ও সামাজিক নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ফলে উৎপাদনের বড় অংশীজন হওয়ার পরও ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব বিষয় সম্পদের সুষম বণ্টনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল রোববার দৈনিক আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন এসব কথা বলেন।
রাজেকুজ্জামান বলেন, তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির প্যারামিটারগুলো যদি বিচার করি- প্রথমত, শ্রমিকের দৈনন্দিন খরচ; দ্বিতীয় দারিদ্র্য সীমার উপরে ওঠার লক্ষ্য; তৃতীয়ত, পুষ্টিমান খাদ্য নিশ্চিত করা; অক্সফামের শোভন মজুরি; প্রতিযোগী দেশগুলোতে শ্রমিকদের মজুরি এবং দেশের মাথাপিছু আয় নিশ্চিত করা। এসব যদি বিবেচনা করি তাহলে ন্যূনতম মজুরি হওয়ার কথা ১৮ হাজার টাকা।
২০১৫ সালে পে-স্কেলে ন্যূনতম বেতন করা হয়েছে ৮ হাজার ২০০ টাকা। আর আজকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৭ হাজার টাকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অক্সফাম দেখিয়েছে তৈরি পোশাক রফতানি করা ৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিকের মজুরি সবচেয়ে কম। অক্সফামের মতে, ২৫২ ডলারের নিচে (২০ হাজার ৬০০ টাকা) কম মজুরি হলে শোভন মজুরি হবে না। সিপিডির মতে, শ্রমিকদের পুষ্টিমানের কথা বিবেচনা করলে মজুরি হওয়ার কথা ১৭ হাজার ৭৮০ টাকা। ২০১৫ সালের আমরাও হিসাব করে দেখিয়েছিলাম ১৫ হাজার টাকার নিচে হলে শ্রমিকদের চলবে না। ৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করলে তা এখন দাঁড়ায় ১৯ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, এ মজুরি ব্যক্তি শ্রমিকের নয়, অর্থনীতির বিকাশে এটা প্রয়োজন। এ মজুরি দিলে অর্থনীতির বিকাশের সাথে যে বৈষম্যের পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে তা রোধ সম্ভব। মজুরি বোর্ড এখনো কাজ শুরু করেনি। কাজ শুরু করলে তা যেন পাঁচ সাত জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রাখে। বাইরে আরও মানুষের সাথে আলোচনা করে এটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাহলে আমরা বলতে পারবো শ্রমিকরা কত চায়, কেন চায় এবং জাতীয় অর্থনীতিতে এর প্রভাব কী।
রাজেকুজ্জামান বলেন, শ্রমিকরা দেশের শিল্প থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। গত একবছরে ১০ লাখ মানুষ দেশের বাইরে চলে গেছে। দেশে মানসম্মত জীবন-যাপন করার উপায় নেই বলে তারা ভিটেমাটি বিক্রি করে বাইরে চলে গেল। আজকে যারা যাচ্ছে পাঁচবছর পর যখন দেশে ফিরে আসবে তখন তারা বোঝা হয়ে পড়বে। দেশের অভ্যন্তরে যদি কাজের পরিবেশ ও শোভন মজুরি নিশ্চিত করা না যায় তাহলে তাহলে পরগাছা অর্থনীতিতে রূপান্তর হবে।
তিনি বলেন, শ্রমিকের কাজের নিশ্চয়তা নেই, প্রভিডেন্ট ফান্ড নেই, চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই, সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। এর ফলে আর্থিক ও চাকরি যাওয়ার চাপের মধ্যে বসবাস করছে। শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করে দেওয়ার বিধান আছে। এই বিধানের কারণে তৈরি পোশাক শিল্প কারখানায় ট্রেড ইউনিয়নও করা যাচ্ছে না। তার সাথে ৩০ শতাংশ শ্রমিক না হলে ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারবে না-এমন আইনি বিধান আছে। এর সাথে আছে ২৬ ধারায় ১২০দিন নোটিশ পে-দিয়ে শ্রমিককে চাকরি অবসান করার মত বিধান। ফলে শ্রমিকরা শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারছে না। সম্পাদনা : আনিস রহমান