বর্ষায় রোহিঙ্গাদের রক্ষার ত্রাণ সংস্থাগুলোর প্রস্তুতি
মনিরা আক্তার মিরা : জীবন বাঁচাতে নিজ ভিটেমাটি ছেড়ে বাংলাদেশে শরণার্থীর জীবন বেছে নিয়েছেন ভাগ্যবিড়ম্বিত এসব মানুষ। থাকছেন কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে। এসব শিবিরে নানা অপ্রতুলতা রয়েছে। নোংরা, ঘিঞ্জি পরিবেশের শরণার্থী শিবিরই এখন আবাস ভাগ্যবিড়ম্বিত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুদের।
জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক মুখপাত্র জোয়েল মিলম্যান বলেন, বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে তারা বাঁশ ও প্লাস্টিকের তেরপলের তৈরি ভঙ্গুর আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে টিকে থাকতে পারে না।
জোয়েল মিলম্যান বলেন, ‘বহু মানুষ পাহাড়ি এলাকায় নিরাপত্তাহীন ভবনে বাস করছেন। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ভারী বৃষ্টিপাত ও ঘূর্ণি বাতাসের ঝুঁকি নিয়ে তারা এখানে বসবাস করছেন। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো মজবুত করার জন্য তাদের জরুরি সাহায্য প্রয়োজন। ভয়াবহ ভূমিধসের আশঙ্কা এড়াতে প্রয়োজনীয় সমর্থন দেওয়া জরুরি।’
তিনি বলেন, জাতিসংঘ অভিবাসন সংস্থা বড় উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে ক্যাম্পে বসবাসরত এক লাখ ২০ হাজার পরিবার এবং মানুষদের তাদের আশ্রয়স্থলগুলো উন্নত করতে মজবুত উপকরণ সরবরাহ করা। তবে সবার জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল তৈরি করা সম্ভব হবে না। কিন্তু এর মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভব।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ-ও লোকজনকে রক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষ করে ব্যাপক মাত্রায় অরক্ষিত ৬০ হাজার শিশুকে বন্যা ও ভূমিধসের বিপদ বাঁচানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি।
ইউনিসেফের মুখপাত্র ক্রিস্টোফি বৌলিরাক বলেন, পানি ও স্যানিটেশন অবকাঠামোর সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ।
ক্রিস্টোফি বৌলিরাক বলেন, ‘শিশুদের স্বাস্থ্যের ওপর পানি ও স্যানিটেশন অবকাঠামোর এই ঝুঁকির প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। কেননা, শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়া ও কলেরার মতো পানিবাহিত রোগের প্রবণতা বেশি।’
তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পের কিছু অংশে শিশুদের বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।’
ক্রিস্টোফি বৌলিরাক বলেন, বর্ষা এবং ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুমে শিশুদের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরও বাড়বে। এই ঝুঁকিপূর্ণ শিশু-কিশোরদের জীবন বাঁচাতে মোবাইল মেডিক্যাল টিম স্থাপন করছে ইউনিসেফ। এর পাশাপাশি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে ডায়রিয়া বা কলেরার মতো পানিবাহিত রোগের চিকিৎসা দেওয়া হবে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার জন্য মিয়ানমার এখনও নিরাপদ নয় বলে মনে করে জাতিসংঘ। এরইমধ্যে প্রত্যাবাসন শুরুর কথা থাকলেও প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে তা পিছিয়ে গেছে।
ইউনিসেফের উপ-নির্বাহী পরিচালক জাস্টিন ফরসিথ সম্প্রতি বলেছেন, ‘মিয়ানমার এখন রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার জন্য নিরাপদ নয়। আমাদের মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তারপর তাদের ফেরত পাঠাতে হবে।’ ভয়েস অব আমেরিকা।