সহসা মুক্তির আশা নেই ষ সক্রিয় হচ্ছে আরো ৩২ মামলা ষ আন্দোলন নিয়ে শঙ্কায় বিএনপি নাশকতার ৩ মামলায় গ্রেফতার দেখানোহয়েছে খালেদা জিয়াকে
শাহানুজ্জামান টিটু : কুমিল্লা, তেজগাঁও ও শাহবাগ থানার তিনটি নাশকতা মামলায় গতকাল বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে অন্য ৩২ মামলা সক্রিয় হচ্ছে বলে জানা গেছে। সহসা মুক্তির আশা নেই দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন আদালতে মামলা হয়েছে ৩৬ টি। এসব মামলার মধ্যে ১১টি উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে। কিছু মামলা রুজু হওয়ার পর আদালতের নির্দেশে প্রাথমিক তদন্ত চলছে। এছাড়া কয়েকটি মামলার চার্জগঠনের ওপর শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে বর্তমান সরকার আদালত ও পুলিশ ব্যবহার করে বেগম জিয়াকে কারাগারে রেখে আরেকটি একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। আর সে জন্যই এসব মিথ্যা মামলা ও জেল জুলুম চালানো হচ্ছে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা থাকা মামলার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য, ১৫ আগস্ট ভূয়া জন্মদিন পালন এবং বাসে পেট্রলবোমা ছুড়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এ মামলাগুলো হয়।
এসব মামলার মধ্যে ৩টি মামলা হয় কুমিল্লার আদালতে। ২টি মামলা হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকলেও বাসে পেট্রলবোমা ছুড়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা এবং রাজধানীর তেজগাঁও ও শাহবাগ থানায় দায়ের করা নাশকতা মামলায় পুলিশ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার দেখিয়েছে গতকাল।
২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারিতে ১টি এবং ৩ ফেব্রুয়ারি ২টি মামলা দায়ের করা হয় চৌদ্দগ্রাম থানায়। পরবর্তী সময়ে আদালত তিন মামলায় খালেদা জিয়াসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এর মধ্যে গত বছরের নভেম্বর মাসে পরোয়ানার এ আদেশ কুমিল্লার কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে পাঠান।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার সংলগ্ন জগমোহনপুর এলাকায় বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের মামলায় গত ২ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। গুলশান থানা পুলিশ ওই মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে বলে জানান খালেদা জিয়ার আইনজীবী মো. কাইমুল হক। ২৫ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার আমলি আদালতে (চৌদ্দগ্রাম) ওই মামলার বিচারকার্যের দিন ধার্য করা হয়েছে।
বিএনপির একাধিক আইনজীবী জানান, তারা মনে করছেন, খালেদা জিয়ার কারামুক্তি বিলম্ব হতে পারে। কারণ তারা এখনও মামলার রায়ের প্রত্যয়িত(সার্টিফাইড) অনুলিপি পাননি। অনুলিপি না পাওয়ায় পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নিতে পারছেন না আইনজীবীরা। আবার এই মামলার বাইরে অন্য মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হলে আলাদাভাবে তাকে জামিন নিতে হবে। এতেও সময় লাগবে।
খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সরকারের তরফ থেকে যদি খালেদা জিয়াকে দীর্ঘদিন জেলে রাখার ইচ্ছা থাকে, তাহলে অবশ্যই দেরি করবে। রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর আইনজীবীরা এটি নিয়ে পর্যালোচনা করবেন। এর পর তারা উচ্চ আদালতে আপিল ও খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন করবেন। এ কারণে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তি লাভের বিষয়টি নিশ্চিত হতে আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে।
বিএনপিতে শঙ্কা : খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে বা পরে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আশা ছিলো কয়েকদিনের মধ্যে তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে বের হতে পারবেন। কিন্ত গতকাল মামলায় গ্রেফতার দেখানো এবং পরবর্তী মামলাগুলোতে গ্রেফতার দেখানো হতে পারে এ সংবাদ জানার পর দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরণের শঙ্কা দেখা গেছে। এছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে যে আন্দোলন চলছে তা কতদিন ধরে রাখা যাবে তা নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকরা চিন্তিত। দলের একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেছেন, সরকার যেভাবে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে এবং মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠাচ্ছে সেখানে আন্দোলনে এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তো রয়েছে। তবে এটা তাদের অস্তিস্তের লড়াই মনে করে নেতাকর্মীরা রাজপথে নেমে এসেছে।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য আইনী লড়াইতো অব্যাহত রাখবো। পাশাপাশি আমাদের যে চলমান আন্দোলন এটাও চালিয়ে যাবো। দলের নেতাকর্মীদের তো দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা যা যা করণীয় তা আমরা করবো। নেত্রীর নিদের্শনা রয়েছে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার। আমরা সেভাবেই এগোচ্ছি।