উন্নত দেশ এবং অসহায়ত্বের কথামালা
কাকন রেজা
উন্নত দেশের গল্প বলি। বাচ্চা ছেলে, স্কুলের দেয়া অংক নিয়ে পেরেশান। কিছুতেই অংকটা বাগে আনতে পারছে না। কী করা, অমনি ফোন পুলিশকে। একটু পরেই পুলিশের গাড়ি এসে হাজির। ঘরে ঢুকে পুলিশ জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে? ছেলেটি বললো, অংক পারছি না। অংক সমস্যার সমাধান করা পুলিশের কাজ নয়। কিন্তু বাচ্চাটির অংক না পারার যে মানসিক অস্বস্তি তা দূর করা কর্তব্য ভাবলেন সেই পুলিশ সদস্য। তিনি নিজেও অংকে কাঁচা। ফলে ফোনে ডাকতে হলো অংকে ভালো এক সহকর্মীকে। সেই সহকর্মী এসে বাচ্চাটিকে অংক বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন, ছেলেটি অংক করলো এবং বললো, ‘থ্যাঙ্কস, পুলিশ আঙ্কেল’। এটি কোন গল্প নয়, সত্যি ঘটনা। আমাদের দেশে বলতে গেলে গল্প আর সত্যির পার্থক্যটা এত সুক্ষ্মতর যে বোঝা মুশকিল। হয়তো এদেশের মানুষ গল্প শুনতেই ভালোবাসে। সেজন্যেই সত্যি ঘটনার নামকরণ হয় ‘গল্প’। আরেকটু ভালো ভাবে বলি। ‘গল্প’ হলো বানানো বিষয়, কল্পনা প্রসুত। বইমেলা চলছে, রয়েছে গল্পগ্রন্থ, উপন্যাস। লেখকের মেধা-মননের সুবিন্যস্ত কাল্পনিক বাক্যবিন্যাসের সৃজিত রূপই গল্প-উপন্যাস। আর যে বাক্যতে সত্যের বিন্যাস, সেটা ‘ইতিহাস’। আমাদের ‘ইন্টেলেকচুয়াল’দের নিয়ে মাঝেমধ্যে বিভ্রান্তিতে পরতে হয়। অনেকে লেখেন ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প’! আমাদের অস্তিত্ব হলো মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের স্বাধীন দেশ আর সার্বভৌম ভূখন্ড হলো মুক্তিযুদ্ধের গর্ভজাত। এটা বানানো গল্পগাঁথা কিংবা সায়েন্স ফিকশনের কল্পগল্পও নয়, এটা ইতিহাস। স্বীকৃত ইতিহাসকে যখন ‘গল্প’ বলা হয়, তখন বুকের মধ্যে কেমন জানি ধাক্কার মতন লাগে। ‘ইভেন্টে’র নাম দেখলাম ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলা’। সেখানে সেই ‘গল্প’ বলতে গিয়েছেন অনেক প্রথিতযশাই। সেলুকাস! তাহলে কী আমাদের দেশের এক শ্রেণির মানুষ মুক্তিযুদ্ধকে ‘গল্পগাঁথা’য় পরিণত করতে চান? আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কী ক্রমেই ‘মিথে’ রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে! ‘মিথ’ শুনতে মজা লাগে, কিন্তু বিশ্বাসযোগ্যতা স্পষ্টতই প্রশ্নবিদ্ধ।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট/ সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ