৫০ হাজার মামলার চাপে বিএনপি
শাহানুজ্জামান টিটু : দুর্নীতি মামলায় দন্ডিত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে তার মুক্তির দাবিতে রাজপথে সোচ্চার দলটির নেতকর্মীরা। সারাদেশে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে বিএনপি। প্রায় প্রতিদিনই বিএনপি কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূলের নেতারা গ্রেফতারের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে হচ্ছে নতুন মামলা। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভীর দাবি গত ৩০ জানুয়ারি থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত তার দলের ৪ হাজার ৫৫০ জনের নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। নতুন করে মামলাও দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০০৭ সাল থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারির ২২ তারিখ পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৫০ হাজার ৭৪টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১১ লাখ ৯১ হাজার ৪৪৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। বর্তমানে ৩ হাজার ৯৪৭ জন নেতা-কর্মী কারাগারে আছেন।
বিএনপির দপ্তর জানায়, গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে সাত বিভাগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৫২৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ২৪ হাজার ৭০৭ জন। গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১ হাজার ৫১৯ জন। গুম হয়েছেন একজন, খুন হয়েছেন একজন।
এই তালিকায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২৪, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১, মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে ৮৮, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ৩, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে ৯, তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১৪, প্রয়াত এম কে আনোয়ারের বিরুদ্ধে ৩৪, মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ৫২, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ৩৭, নজরুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে ৭, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৯, সালাহ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা হয়েছে । এসব মামলা বিচারাধীন।
এ ছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ২৪ জন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ২৯৪টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে বেশি মামলা হয়েছে আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে ৯৬, ভাইস চেয়ারম্যান পদের ২১ জন নেতার বিরুদ্ধে ৩০৮, বরকত উল্লাহ বুলুর বিরুদ্ধে ৬১ মামলা হয়েছে। খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ৫৪, দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ মোট আটজন যুগ্ম মহাসচিবের বিরুদ্ধে ২৭৭, যুগ্ম মহাসচিবদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১২৯টি মামলা হয়েছে হাবিব-উন নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে।
বিএনপি’র পাঁচজন সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৭ জন সম্পাদকের বিরুদ্ধে মোট ৩৩৩টি মামলা হয়েছে। ১২ জন সহ-সম্পাদকের বিরুদ্ধে ১৪৩টি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাহী কমিটির ১৩৪ জন সদস্যের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এ পর্যন্ত বিএনপির ২৩ হাজার নেতা-কর্মী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছে বিএনপি।
জাতীয় স্থায়ী কমিটির নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচনে আমরা যাবো না সে কথা তো আমরা বলছি না। আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে চাই কিন্তু দেখতে হবে সরকার কি আদৌও চাচ্ছে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিক। তাই যদি হতো তাহলে একটা সাজানো মিথ্যা মামলায় প্রহসনের বিচার করে আমাদের নেত্রীকে জেলে পাঠাতো না। এখানে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দরকার। তা কি এখন আছে? আমাদের নেতাকর্মীদের নামে ৫০ হাজার মামলা। এরমধ্যে এই সংখ্যা আরো বেড়েছে। আমাদের দলের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা। এই মামলা মোকাবেলা করতেই তো কোর্টের বারান্দায় হাটতে হচ্ছে দিনের পর দিন। এই অবস্থার মধ্যে আপনি বললেন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে তাহলে তো হবে না।
একদিকে দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি, দলের নেতাকর্মীদের নামে নতুন করে মামলা এবং গ্রেফতারের ঘটনা অন্যদিকে চলতি বছরেই জাতীয় নির্বাচন ও কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন রয়েছে। এই অবস্থার মধ্যে দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেই। তবে দলটি নেতারা বলছেন, বিএনপিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে। এছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তারা আন্দোলনের পাশাপাশি বিকল্প কর্মকৌশল নির্ধারণ করছেন। এরমধ্যে গতকাল কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সরকারের বিরুদ্ধে সর্বস্তর থেকে প্রতিবাদ জানাতে এবং অনাস্থা প্রকাশের জন্য সরকারের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সরকারের নানা দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরতে পোষ্টার ও লিফলেট প্রকাশ করবে। সম্পাদনা: ইকবাল খান