আল্লাহকে ভালোবাসার পুরস্কার
মুফতি আবদুল্লাহ তামিম
মানুষ মানুষকে ভালোবাসে। এটা স্বভাবজাত চাহিদার মতই। কখনো কী এই ভালোবাসা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়? সে দিকে আমরা খেয়ালই করি না। আমরা দুনিয়ার কোনো বস্তুর মালিক হলে বলি এটা আমার। এটা আমার বই, এটা আমার পোষাক। কিন্তু আমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালাকে কী কখনো ভালোবেসে আপন করে বরেছি আমার আল্লাহ। আমারই আল্লাহ আমি তোমায় ভালোবাসি। আর মানুষকেও শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসতে হবে। হ্যাঁ এই ভালোবাসাই আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের থেকে চায়। আর এর জন্য রয়েছে আল্লাহর কাছে অফুরন্ত পুরস্কার।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কেয়ামতের দিনে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করবেন, ‘যারা আমার সন্তুষ্টির জন্য একে অপরকে ভালোবেসেছিল, তারা কোথায়? আজ আমি তাদের আমার আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দান করব।’ (মুসলিম : ২৫৬৬)। অন্য হাদিসে আছে ‘আল্লাহর ওয়াস্তে যারা পরস্পর ভালোবাসার সম্পর্ক রাখে, কেয়ামতের দিন তাদের জন্য নূরের মিম্বর স্থাপন করা হবে, যা দেখে নবী এবং শহীদরা ঈর্ষা করবেন।’ (তিরমিজি -২৩৯০)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘তোমরা জান্নাতে যেতে পারবে না যতক্ষণ না মোমিন হবে। আর তোমরা মোমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পরস্পরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদের এমন আমলের কথা বলে দেব না, যা করলে তোমাদের আপসে ভালোবাসা পয়দা হবে? তা হলো সালামের প্রসার কর।’ (মুসলিম : ৫৪)। অন্য একটি হাদিসে নবীজি বলেছেন, ‘তোমরা একে অপরকে উপহার দাও। তাহলে তোমাদের মধ্যে ভালোবাস ও হৃদ্যতা তৈরি হবে।’ (আদাবুল মুফরাদ : ৫৯৪)।
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যই আমাদের খরচ-ব্যয় হওয়া চাই। হযরত মুয়াজ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য যারা একে অপরকে ভালোবাসে, পরস্পর ওঠাবসা ও দেখা-সাক্ষাৎ করে কিংবা একে অপরের জন্য খরচ করে, তাদের জন্য আমার ভালোবাসা ওয়াজিব হয়ে যায়।’ (মুসনাদে আহমদ-২১৫২৫)।
আল্লাহকে ভালোবাসা ঈমানের পূর্ণতার লক্ষণ। নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাউকে আল্লাহর জন্য দান করল কিংবা আল্লাহর জন্য দান করা থেকে বিরত রইল ও আল্লাহর জন্য কারও সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক কায়েম করল কিংবা আল্লাহর জন্য কারও সঙ্গে বিদ্বেষ পোষণ করল এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাউকে বিবাহ করল, তার ঈমান পূর্ণতা লাভ করেছে।’ (তিরমিজি-২৫২১)। এক ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের সাক্ষাতের জন্য ঘর থেকে রওনা হলো। পথিমধ্যে আল্লাহ এক ফেরেশতাকে মানুষের বেশে পাঠালেন। ফেরেশতা জিজ্ঞেস করল, তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে উত্তর দিল, এই গ্রামে আমার এক ভাই থাকেন। তাকে দেখতে যাচ্ছি। ফেরেশতা জিজ্ঞেস করল, তোমার প্রতি কি তার কোনো অনুগ্রহ রয়েছে, যার বিনিময় দেওয়ার জন্য যাচ্ছ? সে বলল, না। আমি যাচ্ছি এজন্য যে, আমি তাকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালোবাসি। ফেরেশতা বলল, (তাহলে শোন) আমি তোমার কাছে আল্লাহর দূত হিসেবে এসেছি এ কথা জানানোর জন্য যে, আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসেন; যেমন তুমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাস।’ (মুসলিম : ২৫৬৭)।
আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসলে তাকে সেকথা জানিয়ে দেওয়া উচিত। তাহলে উভয়পক্ষ থেকে ভালোবাসার সৃষ্টি হবে এবং সে ভালোবাসা প্রগাঢ় হবে। মিকদাদ বিন মাদিকারিব (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘কেউ অন্যকে ভালোবাসলে যেন তাকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে দেয়।’ (আবু দাউদ : ৫১২৪)। আল্লাহকে ভালোবাসার সাথে সাথে কাউকে যদি ভালোবাসি তাহলে আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা উচিৎ।