বাংলা ভাষার বানান রীতিতে উপেক্ষিত সাধারণ মানুষ
জাফর আহমদ : মোহন মিয়া কারখানা শ্রমিক। তার লেখপড়ার প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত। নিয়মিত পড়া বা লেখা হয় না। এমনকি চিঠিও তার লেখা হয়না। মাঝে মাঝে দুয়েকটি নাম, লিখতে গিয়ে হোচট খায়। নামগুলো যদি হয় জ, ই, স, ন, আ, রেফ, ঞ, ঁ ,ক্ষ বর্ণ দিয়ে। কোন বর্ণ দিয়ে লিখবে তা নিয়ে মোহনের গোলক ধাঁ ধাঁ লেগে যায়।
মোহন মিয়া সহকর্মী শরীফের নাম লিখতে বুঝে উঠতে পারেনা ‘স’ বর্ণ দিয়ে লিখবে না কি ‘শ’ দিয়ে। এর আগে ‘বাড়ি যেতে হবে’ লিখতে গিয়ে লিখে ফেলে ‘বাড়ি জেতে হবে’। বানান হয়নি বলে সহকর্মীরা হাসাহাসি করেছিল। সেদিন থেকে মোহন মিয়া লিখতে ভয় পায়। তার ইচ্ছা আর লিখবেই না। মোহন মিয়ার মত বানান ভয় রাজধানীর মিরপুরের রিকশা শ্রমিক আব্দুল করিমের। রংপুরের নদী ভাঙ্গনে সচ্ছল কৃষক সন্তান এখন নিরুপায় হয়ে ঢাকায় রিকসা শ্রমিক হয়েছে। তার লেখা পড়া নবম শ্রেণি পর্যন্ত। বানান জটিলতায় লেখাই বাদ দিয়েছেন করিম। ছোট্ট-খাট্ট বানান ইংরেজিতে লিখে রাখে। ভুল করলে কেউ ভুল ধরে না, বলে-বিদেশি ভাষা ভুল হতেই পারে। আর চিঠি লেখার বালাই নেয়, মোবাইল ফোনে কথা বলে কাজ শেষ করে।
বাংলা বানান নিয়ে কম লেখা-পড়া জানা সাধারণ মানুষের এটি একটি সাধারণ সমস্যা। অথবা বেশি লেখাপড়া করার পরও বাংলা ভাষা নিয়ে কাজ করতে হয় না-এমন পেশাজীবিদের লেখার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েন। এ সব মানুষের বড় একটি অংশের মধ্যে নিজেদের মধ্যে হতাশা কাজ করে। দুয়েকজন এমনও মনে করেন ভাষা আমাদের জন্য না।
এ বিষয়ে ড. অধ্যাপক মেজবা কামাল বলেন, শ্রমজীবি মানুষদের আমি এ রকম বুদ্ধিহীন ভাবতে চাই না। তারা যারা কল-কারখানায় কাজ করে তাদের এটুকু জানেন। প্রয়োজনে তাদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিখিয়ে নিতে হবে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা গেলে এ ধরনের দুর্বলতা থাকবে না। তবে যুগের পরিক্রমায় ভাষার বানান রীতি পরিবর্তন হচ্ছে। এটা আগামীতেও হবে।
‘ৎ’ ও ‘ত’ দুটি বর্ণের মধ্যে একটির ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ধরণের দুএকটি বর্ণের পরিবর্তন আনা যেতে পারে। বিষয়টি নিয়ে ভাষা ইনিস্টিটিউট ভাবতে পারে। তবে ঢালাও ভাবে পরিবর্তনের সুযোগ নেই বলে মনে করেন কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ। তবে ভাষার শেখার ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষকদের দায়িত্বশীল হতে হবে। সম্পাদনা : ইয়াছির আরাফাত
#