শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে দেশকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সরকার : ফখরুল
মাঈন উদ্দিন উদ্দিন : বিএনপির কালো পতাকা প্রদর্শনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ দিয়ে হামলা চালিয়ে সরকার দেশকে সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল দুপুরে নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, আজকে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আপনারা সব দেখেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিনা উসকানিতে এই কর্মসূচিতে অতর্কিত হামলা করেছে। এই অবৈধ সরকারের মন্ত্রীরা সারাক্ষণ চেষ্টা করছে উসকানি দিয়ে এবং এই ধরনের নির্যাতন-অত্যাচার চালিয়ে পুরো পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে ফেলছে। পুরো পরিস্থিতিকে তারা নিজেরাই এমন জায়গায় নিয়ে যেতে চাইছেন যে, সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করা।
তিনি বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বিএনপি সম্পূর্ণভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাস করে এবং বিশ্বাস করছে, সেভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে আসছে।
বেলা ১১টা থেকে ১২ পর্যন্ত কালো পতাকা প্রদর্শনের কর্মসূচির বানচালের পর বেলা ১২টায় কার্যালয়ের তিন তলায় এ সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি মহাসচিব।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের এই কর্মসূচি ছিল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। রাস্তা ব্লক না করে কালো পতাকা প্রদর্শনের ব্যবস্থা আমরা করেছিলাম। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই কর্মসূচিতে অতর্কিত হামলা করে। পুলিশ নেতাকর্মীদের বেপরোয়াভাবে গ্রেফতার করে, টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলে। তারা লাঠিচার্জও করে।
আমি পুলিশ সদস্যদের এহেন আচরণের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারা এর কোনো জবাব না দিয়ে রঙিন পানি ছুঁড়তে থাকে এবং বেধড়ক লাঠিচার্জ ও গ্রেফতার অব্যাহত রাখে। রঙিন পানিতে আমাকেসহ দলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ ও উপস্থিত অসংখ্য নেতাকর্মীকে সম্পূর্ণ ভিজিয়ে দিয়ে লাঠিচার্জ করতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পর আমাদের কার্যালয়ে টিয়ারগ্যাস ছুঁড়লে ভেতরে দম বন্ধ করা হিটলারের গ্যাস চেম্বারের মতো এক বীভৎস পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিনা উস্কানিতে বিএনপির কর্মসূচিতে আক্রমণ করে তারা আবার প্রমাণ করলো দেশ এখন দুর্বিনীত-দুঃশাসনের করাল গ্রাসে।
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রের শেষ নিশানাকে নিশ্চিহ্ন করার জন্যই সরকার এই অগণতান্ত্রিক ও দমনমূলক পন্থা অবলম্বন করেছে। একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনে বিরোধী দল ও তাদের সমালোচনাকে বিপজ্জনক মনে করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছে এই গণবিরোধী শক্তি।
তিনি বলেন, সংবিধানে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। এখন বাস্তবতা হচ্ছে, এখন প্রজাতন্ত্রের মালিক আওয়ামী লীগ ও তাদের সাজানো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই মহাতা-বের আমরা নিন্দা ও ঘৃণা জানাচ্ছি। অবিলম্বে এই নির্যাতন বন্ধ করুন। নইলে এর দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।
ফখরুল বলেন, মহিলাদের কী নির্মমভাবে পুলিশ আক্রমণ চালিয়েছে। তাদেরকে পুরুষ পুলিশরা ধরে গ্রেফতার করেছে। এটা আগে কখনো দেখিনি। অফিসের ভেতর ঢুকে গলায় পারা দিয়ে টেনেহিঁচড়ে গ্রেফতার করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনের ওপর পুলিশ আক্রমণ করে তাকে গুরুতর আহত করেছে। মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলকে নিচে ফেলে দিয়ে পিটিয়ে তাকে গাড়িতে তোলা হয়েছে। তিনি এক সময়ে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। এই হলো দেশের অবস্থা। তারা (আওয়ামী লীগ) যখন গণতন্ত্রের কথা বলে সেই গণতন্ত্র মুনাফেকি ছাড়া আর কিছু নয়।
কালো পতাকা প্রদর্শনের এই কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ বিপুলসংখ্যক মহিলা ও পুরুষ নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। একই সঙ্গে এই ঘটনায় আটক নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিও জানান মহাসচিব।
পুলিশ বলেছে আপনারা এই কর্মসূচির অনুমতি নেননি- এই রকম প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, সব কর্মসূচিতে অনুমতি লাগবে কেন? আমরা তো রাস্তা ব্লক করিনি, মিছিল করিনি, ১৪৪ ধারা ভাঙিনি।
সভা-সমিতি করা যাবে না। ঠিক আছে। কিন্তু ফুটপাতে দাঁড়িয়ে কালো পতাকা দেখানো যাবে না।- এটা কেমন কথা? এটা একটি মৌলিক অধিকার। তাহলে কি সংবাদ সম্মেলন করতে অনুমতি লাগবে? আমার বাড়িতে কয়েকজন নেতার সাথে আলাপ করতে অনুমতি লাগবে?
সংবাদ সম্মেলন শেষে বেলা দেড়টার দিকে দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আহত মহিলা নেতাকর্মীদের নিয়ে যাওয়া হয়। সম্পাদনা : আনিস রহমান