সিরিয়া নিয়ে শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যেই কি যুদ্ধ বেধে যাবে?
মনিরা আক্তার মিরা : সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ এখন এমন এক জটিল অবস্থায় পৌঁছেছে যে, বড় শক্তিধর দেশগুলো সেখানকার নানা সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে দিয়ে প্রক্সি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে অনেকেই প্রশ্ন করছেন, এবার কি পরাশক্তিগুলোর নিজেদের মধ্যেই যুদ্ধ বেধে যাবে?
বিবিসির সেবাস্টিয়ান আশার লিখছেন, সিরিয়ার সরকার এবং তার বিরোধীদের মধ্যে যে সংঘাত থেকে এই সংকটের সূচনা হয়েছিল তা এখন প্রায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। দেশটি এখন পরিণত হয়েছে নানা শক্তির পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ক্ষেত্রে।
বাইরের যেসব শক্তি আগে কূটনীতির পথে ছিল, তারা এখন সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের পথে নেমে পড়েছে। রাশিয়া আর ইরান হচ্ছে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জড়িত আর্থিক, সামরিক, রাজনৈতিক সব দিক থেকেই। যুক্তরাষ্ট্র অপেক্ষাকৃত কম জড়িত কিন্তু এ কারণেই তাদের স্পষ্ট বা নিয়ন্ত্রক ক্ষমতা নেই। তুরস্ক আরেকটি জড়িত দেশ কিন্তু তারা বিদ্রোহীদের সমর্থন করলেও কুর্দিদের ঠেকাতে বেশি আগ্রহী।
দক্ষিণে ইসরায়েল লেবাননের ১৬ বছরের গৃহযুদ্ধের সময় যেমন, তেমনি সিরিয়ার ক্ষেত্রেও প্রধানত নিরব ভূমিকা রেখে চলেছে। তারা সিরিয়ায় কথিত ইরানি ঘাঁটি এবং হিজবুল্লাহর অস্ত্র সরবরাহের মতো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতেই আক্রমণ সীমিত রেখেছে।
যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইরান, তুরস্ক, কুর্দি, এমনকি বাশার আসাদ সরকার এদের প্রত্যেকেরই স্বার্থ অপরের বিপরীত। কিন্তু প্রক্সি বাহিনীর মাধ্যমে তৎপরতা চালানোর কারণেই তাদের সরাসরি সংঘাত হয়নি। শুধু ইসলামিক স্টেটের মোকাবিলা করার সময়ই তারা তাদের মতপার্থক্য দূরে সরিয়ে রেখে একসাথে কাজ করেছে।
কিন্তু ইসলামিক স্টেটের পরাজয়ের ভেতর দিয়ে পরিস্থিতিতে এক নতুন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে কুর্দিরা আইএসকে তাড়ানোর সময় আরও এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে আর তা তুরস্ককে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
রাশিয়া এবং ইরান সিরিয়ার গভীরে তাদের অবস্থান পাকা করে ফেলেছে যার পাশাপাশি বাশার আসাদের বাহিনী নতুন নতুন এলাকা পুনরুদ্ধার করছে।
ইসরায়েল দেখছে যে হিজবুল্লাহ এবং ইরান তার সীমান্তের আরও কাছাকাছি চলে এসেছে যা তাকে সতর্ক এবং অপেক্ষাকৃত সক্রিয় করে তুলেছে।
এ অবস্থায় এমন ঝুঁকি আছে যে প্রক্সিদের যুদ্ধ এখন তাদের পেছনে যে শক্তিগুলো পেছন থেকে সুতো নাড়ছে তাদের সরাসরি যুদ্ধে পরিণত হয় কিনা। তা হবে ঘটনাপ্রবাহের এক খুবই বিপজ্জনক মোড় বদল। পেছনের শক্তিগুলো সব সময়ই অতীতে এরকম সম্ভাবনা দেখা দিলে সংঘাত থেকে পিছিয়ে এসেছে।
যদিও এরকম যুদ্ধের কথা শুনতে অদ্ভুত শোনাতে পারে, কিন্তু গত কিছুদিনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। কদিন আগেই সিরিয়ান ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে একটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে। ইসরায়েলি আকাশসীমার ভেতরে একটি ইরানি ড্রোন ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
একটি রিপোর্ট বেরিয়েছে যে মার্কিন-কুর্দি ঘাঁটির দিকে এগুনোর সময় মার্কিনিদের হাতে কয়েকজন রুশ ভাড়াটে সৈন্য নিহত হয়েছে।
তুরস্ক সিরিয় কুর্দিদের ওপর হামলা শুরু করেছে যাতে তারা সরাসরি আমেরিকানদের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে, যদিও তারা আবার ন্যাটো মিত্র। এর ফলে সিরিয়ার বাইরের শক্তিদের একটা সর্বগ্রাসী সংঘাতের আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। এমন কিছু যদি না-ও হয় অন্তত সিরিয়া সংকটকে তা আরও দীর্ঘায়িত করতে পারে। বিবিসি বাংলা