নথি এলে খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে সিদ্ধান্ত
এস এম নূর মোহাম্মদ : নিম্ন আদালতের নথি আসার পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিবেন হাইকোর্ট। জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গতকাল রোববার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে করা খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে ওই মামলায় বিচারিক আদালতে দেওয়া খালেদা জিয়ার জরিমানাও স্থগিত করা হয়। এছাড়া বিচারিক আদালতের নথি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পাঠাতে সংশ্লিষ্ট আদালতকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
গতকাল আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। দুপুর ২টায় জামিন শুনানি শুরুর আগেই বিএনপিপন্থি বিপুল সংখ্যক আইনজীবী আদালত কক্ষে উপস্থিত হলে হই চই শুরু হয়। দুই বিচারক বেলা সোয়া ২টার দিকে যখন বেঞ্চে বসলেন আদালতকক্ষ তখন তিল ধারণের জায়গা ছিল না।
এ পরিস্থিতিতে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক দুই পক্ষের আইনজীবীদের বলেন, এত হট্টগোল হলে শুনানি করা যাবে না। বিচারক তখন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বাদে অন্যদের আদালত কক্ষের বাইরে চলে যেতে বলেন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ১০ মিনিট সময় দিয়ে এজলাস থেকে নেমে যান। দুই বিচারক তাদের খাস কামরায় চলে যাওয়ার পর বিএনপিপন্থি জুনিয়র আইনজীবীরা আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। বেলা আড়াইটায় বিচারকরা বেঞ্চে ফেরেন এবং জামিন শুনানি শুরু হয়।
শুনানিতে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, এখানে সংক্ষিপ্ত সাজা। আদালতের রেওয়াজ আছে জামিন পেতে পারেন। এছাড়া তিনি বয়স্ক নারী। কোর্টের প্রথা রয়েছে কেউ নারী হলে এবং সাজা কম হলে আদালত জামিন দিয়ে থাকে। এসময় তিনি আবেদন থেকে খালেদা জিয়ার শারীরিক জটিলতার বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
অপরদিকে জামিনের বিরোধিতা করে দুদক কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান বলেন, আপিল বিভাগের রায় রয়েছে এ ধরনের লঘু দ-ের ক্ষেত্রে দ্রুত আপিল নিষ্পত্তি করতে হবে। আর জামিনও দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, আপিলকারীর শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে জামিন চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এর স্বপক্ষে কোনো মেডিকেল সার্টিফিকেট তারা আদালতে দাখিল করেননি।
আদালত বলেন, উনারা তো শারীরিক অবস্থার বিষয়টি এফিডেভিট আকারে দিয়েছেন। আপনি যদি অস্বীকার না করেন তাহলে ধরে নিতে হবে এটা ঠিক আছে।
দুদক কৌঁসুলি বলেন, আপিলকারীর জামিন আবেদন থেকে দেখতে পাচ্ছি তার কারাবাসের মেয়াদ হচ্ছে ২ মাস ৫ দিন। আসামির কাস্টডি পিরিয়ড এবং অপরাধের গভীরতা দেখে তাকে জামিন দেওয়া যায় না। তবে খালেদা জিয়ার বয়স নিয়ে আমাদের কোনো বিরোধিতা নেই।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিচারিক আদালতের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ, সাক্ষ্য বাতিল, পুনরায় তদন্ত এবং বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে কয়েকবার হাইকোর্টে এসেছেন আপিলকারী। মামলার বিচার বিলম্বিত করতে এমন কোনো ধাপ নেই যে এর আশ্রয় নেয়া হয়নি। এ কারণে সাড়ে ৯ বছর লেগেছে মামলাটি নিষ্পত্তি হতে। তারা ২৬ বার দ্বারস্থ হয়েছেন উচ্চ আদালতের। ফলে এই মামলায় এখন খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হলে এই মূল আপিলের শুনানি আর কখনই সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, দুর্নীতির মামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি কয়েক বছর জেল খেটে মুক্তি পেয়েছেন। এ বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। এখনই খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হলে বৈষম্য হবে। আদালত বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল এটা কোনো উদাহরণ হলো? একজন এতদিন জেল খেটেছেন বলেই কি আরেকজনকে এতদিন জেল খাটতে হবে?
দ্রততম সময়ে আপিল শুনানি শুরুর তাগিদ দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমাদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে। আপিল শুনানির জন্য এক মাসের মধ্যে পেপারবুক প্রস্তুত হতে পারে। যেমন বিডিআর বিদ্রোহ মামলার আপিলের ক্ষেত্রে প্রস্তুত করা হয়েছিল। তাই আমার আবেদন হচ্ছে, জামিন না দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আপিল শুনানি শুরু করা হোক। শুনানি শেষে বিচারক বলেন, জামিন বিষয়ে শুনানি শেষে হয়েছে। বিচারিক আদালতের নথি এলে পরে এ বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মধ্যে ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফএম হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন জামিন শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।