মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান রেখে কোটা প্রথা সংস্কার প্রয়োজন
মো. আবু জাফর
২০১৪ সালে নির্বাচনের পূর্ব মুর্হূতেও আমাদের দেশে কোটা প্রথা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তখন আমাদের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এতে কোনভাবেই সারা দেয়নি। ফলে এই কোটা নিয়ে যে আলোচনা উঠেছিল, তা তখন জনতার সামনে টিকতে পারেনি। তবে বর্তমান সময়ে কোটা প্রথা নিয়ে যে আন্দোলন হচ্ছে, তাতে বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির বিভিন্ন দলগুলোর বেশ ভাল একটি ইতিবাচক মনোভাব দেখতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। কেন্দ্রীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ছাত্র নেতা এই আন্দোলনের সাথে একমত প্রকাশ করেছেন বলে আমরা শুনেছি। বিশ্বের কোন দেশে এত বড় সংখ্যক কোটা ব্যবস্থা কোথাও নাই। মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলবেন, আমাদের দেশের মত পৃথিবীর অনেক দেশেই মুক্তিযোদ্ধা আছে। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে এই কোটা মাত্র একবার ব্যবহার করার নিয়ম রয়েছে। আমরা সেটাকে আমাদের দেশে প্রচলন করতে পারি। আমাদের হৃদয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রয়েছে অত্যন্ত গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান। আমাদের এই সম্মানের জায়গায় তাদেরকে রাখতে চাই। তাদেরকে ছোট বা খাটো করার সামান্যতম ইচ্ছা আমাদের নেই। আমরা তাদের প্রতি সম্মান রেখে বলছি, তারা নিজেদের জন্য ব্যবহার করুক বা তার সন্তানের জন্য ব্যবহার করুক বা তার পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ব্যবহার করুক। কিন্তু তা ব্যবহার করবে মাত্র একবার। কিছুদিন আগেই আমি প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে দেখেছি, আমাদের দেশের বিগত বিসিএস পরিক্ষার প্রতিটি বিসিএস পরিক্ষায় আমরা পাচঁশ থেকে শুরু করে সাত আটশ সিট খালি থেকে যেতে দেখেছি। শুধু ৩৬ তম বিসিএসে আমরা দেখেছি, ৩৭ তম বিসিএস থেকে টানা হয়েছে। এথেকে আমরা প্রতিদানরূপে জাতিকে কি দিচ্ছি, কিছুই না। যার কারণে কোটা খালি থেকে যাচ্ছে, সিট গুলোর যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। একই সাথে পুরো জাতি বেকারত্বের বোঝা নিয়ে ভুগছে। এ সমস্যাগুলোর প্রভাব দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। প্রতি বছর আমাদের দেশে যে পরিমাণ শিক্ষার্থী ¯œাতক শেষ করে বের হচ্ছে সে পরিমাণ চাকরীর ক্ষেত্র বাড়ছে না। এই কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে যদি আমরা এটাকে ১০-১৫ শতাংশে আনতে পারি, তাহলে এই ভুগান্তিতে আর পড়তে হবে না। আমি মূল্যায়নের জায়গা থেকে কাউকে ছোট বা বড় করছি না। যার যার স্থান থেকে, যার যার অবস্থান থেকে যদি আমরা সম্মান টা বজায় রাখি, তাহলে আমার মনে হয় তাতে তেমন কোন সমস্যা হবে না। প্রত্যেকের সম্মানের দিক বিবেচনা করে ১০-১৫ শতাংশের মধ্যে কোটা প্রথা রাখা হলে দেশের বেকার সমস্যা যেমনি দূর হবে, তেমনি হতাশাগ্রস্থ ছাত্রের সংখ্যাও দিন দিন কমবে বলে মনে করি। আর আশা করা যায়, আমাদের দেশ দিন দিন উন্নয়নের শিখরে পৌছাবে। সাথে সাথে সবার কাছে এর একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থান তৈরী হবে। যারা কোটা প্রথাকে সংস্কার করার কথা বলছে তার মানে এই না যে, তারা একে বাদ দেয়ার কথা বলছে। বরং কোটা প্রথাকে একটি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা লাগবে। যেটাকে আমরাও সম্মান করতে পারি, সাথে সাথে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও সম্মান করতে পারে।
পরিচিতি : ছাত্র, ঢাকা কলেজ/ মতামত গ্রহণ : শাখাওয়াত উল্লাহ/ সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ