নির্যাতনের নাম ৩২
কাদের গনি চৌধুরী
আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা কালো আইন হলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ ‘কালোর চেয়েও কালো’ আইন। এই আইন পাস হলে মানুষের বাক স্বাধীনতা বলে কিছু থাকবে না। এই আইনে মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে হয়রানির আশংকা প্রবল। যা স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করবে। এই আইন মুক্ত সাংবাদিকতার জন্য হুমকি, মুক্ত চিন্তার জন্য বড় বাধা, স্বাধীন মতপ্রকাশের অন্তরায় এবং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার মোক্ষম অস্ত্র। এই আইন কার্যকর হলে স্বাধীন গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা হুমকির মুখে পড়বে। এই আইন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে হরণ করবে। এআইন মুক্ত চিন্তার স্বাধীনতাকে খর্ব করবে এবং এর ফলে আমাদের ইতিহাসের ওপর গবেষণা সীমিত করবে। এটা এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, সরকার মিডিয়াকে কব্জা করতে অসৎ উদ্দেশ্যে এই আইন করছে। সাংবাদিকদের হাত-পা বাঁধার জন্য এই আইনই যথেষ্ট। এই আইন পাস হলে সাংবাদিকরা তথ্য পাবে না, আর তথ্য পেলেও মামলার ভয়ে তা প্রকাশ করতে পারবে না । যার কারণে দেশবাসী প্রকৃত সংবাদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। আমরা মনে করি, প্রস্তাবিত এই আইন দেশ এবং জাতিকে গভীর সঙ্কটের দিকে ঠেলে দেবে। আইনের সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির অন্যায়কারী এবং স্বার্থন্বেষী মহল নিজেদের হীন স্বার্থে আরও সুবিধা আদায় করবে। মানহানির অজুহাতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করে অবাধ তথ্য প্রবাহের ধারাকে বাধাগ্রস্থ করবে। আর এই আইন এদের হাতে সে অস্ত্র তুলে দেবে। সাংবাদিকদের গতিবিধির ওপর এই আইন প্রছন্ন নিয়ন্ত্রণ যা স্বাধীন মতপ্রকাশের অন্তরায়। অনুমোদন পাওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ‘কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ’ সংক্রান্ত ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কোনো ধরনের গোপনীয় বা অতি গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করেন বা সংরক্ষণে সহায়তা করেন তাহলে কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ বলে গণ্য হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শাস্তি অনধিক ১৪ বছর কারাদ- বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবে। আর এই অপরাধ যদি একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার করেন বা বার বার করেন তাহলে যাবজ্জীবন কারাদ- বা এক কোটি টাকা অর্থদ- অথবা উভয় দ-ে দ-িত হবেন।’ এই ধারা দেখেই বুঝা যায়, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন মত প্রকাশের স্বাধীনতা কতখানি বাধাগ্রস্ত করে।
পরিচিতি : সিনিয়র সাংবাদিক/মতামত গ্রহণ : সানিম আহমেদ/সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ