আবির-কুমকুমে রাঙা হোলি উৎসবে মুখর পুরান ঢাকা
স্বপ্না চক্রবর্তী : আবীর আর কুমকুমের রঙে রাঙা হয়ে উঠেছিল পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর সবগুলো মন্দির। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় উৎসব দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার জমেছিল হোলি খেলা। ‘হোলি’ বা ‘দোলযাত্রা’ উৎসব উপলক্ষে এদিন রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য জায়গার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের লোকজনও একে অন্যকে বর্ণিল রঙে রাঙিয়ে মাতোয়ারা হন। আবীরে রাঙা তরুণ-তরুণীদের উচ্ছাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এমনকি অভিভাবকের সঙ্গে ছোট শিশুরাও এ থেকে বাদ যায়নি।
এদিন সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা মন্দিরে গিয়ে পূঁজা দেয়। মাতে আবীর আর সিঁদুরের খেলায়। গতকাল শাঁখারীবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই সব বয়সী নারী-পুরুষ হোলি খেলায় মেতে উঠেছেন। তারা নিজেদের গায়ে রং লাগিয়ে এ উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন। তরুণ-তরুণী ও ছোট ছেলে-মেয়েদের বাটিতে রং নিয়ে এ মাথা থেকে ও মাথায় ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। তারা ‘শুভ হোলি’ বলে একে অন্যের গালে আবির মাখিয়ে দেন। এ উপলক্ষে দোকানে দোকানে বিশেষ মিষ্টান্ন ও পূজার জন্য বিশেষ ফুলের মালা বিক্রি হতে দেখা যায়। শাঁখারীবাজারের দোকানিরা বর্নিল সব রঙের গুঁড়া ও পিচকারি (তরল রং ছিটানোর পাইপ) ইত্যাদি বিক্রিতে ব্যতিব্যস্ত থাকেন।
শাঁখারীবাজারের শনি মন্দিরে পূজা দিতে আসা গৃহীনি রাখি পাল বলেন, দোল পূর্ণিমার দিন আবীর দিয়ে ছেলেমেয়েরা খেলেছে। বাদ যায়নি আমরাও। প্রতিবেশীদের সাথে ভাগ করে নিয়েছি হোলির আনন্দ।
বহুকাল থেকেই ভারতে এই উৎসব পালন হতো। তারপর পুরান ঢাকার শুধু স্থানীয় সনাতনধর্মের বিশ্বাসীরাই এই উৎসব পালন করতেন। তবে সময়ের পালাবদলে বাংলাদেশে জনপ্রিয় উঠছে এ উৎসবটি। জাত-ধর্মের দেয়াল টপকে সার্বজনীন হতে শুরু করেছে দোল উৎসব। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ এতে অংশ নিচ্ছেন। গতকাল এ উৎসবে যোগ দিতে নতুন ঢাকা থেকেও অনেককে পুরান ঢাকার, তাঁতীবাজার, লক্ষ্মীবাজার, বাংলাবাজার ইত্যাদি এলাকায় উপস্থিত হতে দেখা গেছে। এদিকে দোলযাত্রা উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে দোল উৎসব ও কীর্তনের আয়োজন করা হয়েছে।
পৌরাণিক কাহিনীতে আছে, গায়ের রং ঢাকতেই বসন্তের এক প্রেমময় মুহুর্তে আবীর দিয়ে রঙ খেলা শুরু করেন শ্রীকৃষ্ণ। রাধার অমন জ্যোৎস্নার মতন গায়ের রঙ দেখে কালাচাঁদের হিংসা হতেই পারে। তবে কালের বিবর্তনে রাধা ও গোপিনীদের সঙ্গে কৃষ্ণলীলায় থেমে থাকেনি এই হোলি খেলা কিংবা দোলউৎসব। বর্তমানে হোলি খেলা হয়ে উঠেছে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মনের রঙে সকলকে রাঙিয়ে দেওয়ার বাসন্তী উৎসব। আবার, বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, ফাল্গুনী পূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির ও গুলাল নিয়ে রাধিকা ও অন্যান্য গোপীদের সাথে রং খেলায় মেতেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি হয়। দোলযাত্রার দিন সকালে তাই রাধা ও কৃষ্ণের বিগ্রহ আবির ও গুলালে স্নাত করে দোলায় চড়িয়ে কীর্তনগান সহকারে শোভাযাত্রা বের করা হয়। এরপর ভক্তেরা আবির ও গুলাল নিয়ে পরস্পর রং খেলেন। দোল উৎসবের অনুষঙ্গে ফাল্গুনী পূর্ণিমাকে দোলপূর্ণিমা বলা হয়। আবার এই পূর্ণিমা তিথিতেই চৈতন্যদেবের জন্ম বলে একে গৌরপূর্ণিমা নামেও অভিহিত করা হয়।