পতাকা বৈঠকে সাড়া দেয়নি বিজিপি : বিজিবি সীমান্তের শূন্যরেখায় মিয়ানমারের সৈন্য সমাবেশ, সর্তকাবস্থানে বিজিবি
সুজন কৈরী ও শ. ম. গফুর, উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি : বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের জিরো লাইন এলাকায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অন্যত্র চলে যেতে মাইকিং করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। ফলে শূন্য রেখায় থাকা রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় গ্রামবাসীর মাঝেও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ওপারে মিয়ানমারের সৈন্যরা সশস্ত্র অবস্থান নিয়েছে। এপারে বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি) সর্তক অবস্থানে রয়েছে।
গতকাল বিকেলে সদর দপ্তর পিলখানায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অপারেশন্স অ্যান্ড ট্রেনিং) মুজিবুর রহমান বলেন, তমব্রু সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা তাতে সাড়া দেয়নি। তিনি বলেন, মিয়ানমার অংশে তমব্রু সীমান্তের জিরো লাইন এলাকায় কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। কিছুদিন ধরে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ ও সেনাবাহিনী তমব্রু সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া, সেগুলো আরো মজবুত করা, উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন সার্ভেলেন্স ইকুইপমেন্ট স্থাপন করার কাজ করছে। এর মধ্যে শব্দযন্ত্রের মাধ্যমে সেখানকার রোহিঙ্গাদের অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য তারা বারবার বলছে, যা গত একমাস ধরে চলছে। (গতকাল) সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা নাগাদ তমব্রু বর্ডার পোস্টের ৩৪ ও ৩৫ পিলারের মাঝামাঝি এলাকায় মিয়ানমার অংশের প্রায় ১৫০ গজ অভ্যন্তরে সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে। বেশ কিছু মিলিটারি প্যাটার্নের পিকআপের ট্রাক-লরির মাধ্যমে তারা সেখানে ভারী অস্ত্র স্থাপন করেছে। আমরা সার্ভেলেন্স ও ইন্টিলিজেন্সের মাধ্যমে এসব তথ্য জানতে পেরেছি। এরপর থেকে আমরাও সতর্ক অবস্থানে রয়েছি, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। তাদের ইতোমধ্যে পতাকা বৈঠকের আহ্বান করেছি। প্রতিবাদলিপিও পাঠিয়েছি। কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি। আশা করি, দ্রুততম সময়ে এর সমাধান হবে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ পতাকা বৈঠকে সাড়া না দিলে বিজিবি কী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মুজিবুর রহমান বলেন, বর্ডার এলাকায় ভারী অস্ত্র মোতায়েন, সৈন্য সমাবেশ করা বর্ডার নর্মসের বাইরে। আমরা এটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। সতর্ক অবস্থানে আছি। যে কোনো ধরনের পরিস্থিতির জন্য আমরা প্রস্তুত। মিয়ানমার কোন কারণে ও কী পরিমাণ সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সৈন্যদের সঠিক সংখ্যা বলা যাচ্ছে না। তবে বর্ডারে যে পরিমাণ সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে তা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। আর সেজন্য আমরা সতর্ক অবস্থানে থেকে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করেছি। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তারা মূলত রোহিঙ্গাদের আমাদের দেশে পাঠাতে এমনটি করছে। তাদের বলা হচ্ছে, ওখান (জিরো লাইন) থেকে অন্যত্র চলে যেতে।
শূন্য রেখায় শিবির করে থাকা রোহিঙ্গাদের অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য মিয়ানমারের সেনাদের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ইতিপূর্বে কিছু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতা মাষ্টার দিল মোহাম্মদ, মৌলবী আরেফ আহমদ, আনোয়ার শাহসহ আরো অনেকে। তারা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ওপারে মিয়ানমারের অতিরিক্ত সেনাবাহিনী, বিজিপি মোতায়েন রয়েছে। সেখান থেকে মাইক্রোফোনে প্রচার করা হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক ভাবে শূন্য রেখায় বসবাস করা নিষিদ্ধ, তাই শূন্য রেখা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাও। না গেলে আইন সম্মতভাবে বল প্রয়োগ করে তাড়ানো হবে’। দিল মোহাম্মদ জানান, সেনাদের এই বার্তায় শিবিরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আমরা এখন শান্তির সঙ্গে একটু ঘুমাতেও পারছি না। শিবিরের অনেক রোহিঙ্গা এখন পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চাইছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে অন্তত ২ শতাধিক পরিবার প্রবেশ করেছে। কারণ জোর করে তাদের রাখাইনে ফেরত পাঠানো হতে পারে বলে তারা আতঙ্ক বোধ করছিল।’
সীমান্তে থাকা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান জানিয়েছেন, মিয়ানমারকে পতাকা বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, এখনো পর্যন্ত সাড়া পাইনি।