আশ্রয়দাতার ব্যবস্থা করতে পারলেই তারা সেখান দিয়ে স্বর্ণগুলো পাচার করে থাকে
নূরুল আনোয়ার
বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার মধ্যে অন্যতম একটি বুড়িমারী। এ এলাকাটি বর্তমানে সোনা পাচারকারীদের জন্য একটি নিরাপদ এলাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, আমাদের দেশে যে স্বর্ণ আসে তার কিছু অংশ প্রথমত কিছু সংখ্যক বড় বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ীরাই কিনে। আর আরেকটি অংশ আমাদের সাধারণ মানুষ নিজেদের ভবিষ্যৎ বা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সঞ্চয় করে রাখে। আর বাকি অংশ আসে পাচার হওয়ার জন্য। আমাদের দেশে এসকল স্বর্ণ মূলতঃ আসে ভারত থেকে।
তাদের দেশ থেকে আমাদের দেশে যে পরিমাণ স্বর্ণ পাচার হয়ে আসে তার পরিমানটি অনেক বড়। তাদের এই প্রচারকৃত দ্রব্যের অর্থ তারা বাংলাদেশি মুদ্রায় নেয় না বরং তারা তা ডলারে হিসেব করে নেয়। এখন তারা যখন যে সীমান্ত নিরাপদ বলে মনে করে, তখন তারা সে সীমান্ত ব্যবহার করে। আমরা এর আগেও এর নিদর্শণ দেখেছি। তারা বুড়িমারী রুট ব্যবহার করছে। কারণ, তাদের সাথে সেখানকার স্থানীয় প্রশাসনের সাথে ভাল একটি বোঝা পড়া হয়েছে বিধায় তারা এ রুটে পণ্য সরবরাহ করছে। আবার মাঝে মাঝে আমরা দেখি, এই পাচার ব্যবস্থা কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এলাকা দিয়েও হয়ে থাকে।
এদের কোন নির্দিষ্ট এলাকা নাই। তারা যখন যে এলাকা দিয়ে পাচার কাজ সম্পাদন করতে পারে তখন তারা সে এলাকাকেই বেছে নেয়। এক্ষেত্রে তাদেরকে স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসন, জনতা সহায়তা করে থাকে। কারণ, তাদের আশ্রয় দাতা ছাড়া তারা কোন কাজ করতে পারে না। তাদের নিজেদের জন্য আশ্রয়দাতার ব্যবস্থা করতে পারলেই তারা সেখান দিয়ে স্বর্ণগুলো পাচার করে থাকে। এখন এই পাচার ব্যবস্থা সহসায় তো আর রোধ হবে না। এর জন্য প্রয়োজন বেশকিছু উপকরণ। কারণ, ভারতের সাথে আমাদের যে অবৈধ আমদানী বা রপ্তানী হয়, তাকে আমরা চোরা চালান বলতে পারি। এ ব্যবসা অনন্তকাল চলবে। কারণ, ভারতের জিনিসের চাহিদা আছে, প্রয়োজন আছে, কাছাকাছি আনা নেয়ায় সুবিধা আমাদের দেশে আছে। তাই এই ব্যবসা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়টাও অনেকটা ক্ষীণ। সবচেয়ে বড় বিষয়টি হলো, এই ব্যবসা থেকে ফিরে আসার বা এই ব্যবসা আটকানোর যে মন মানসিকতার প্রয়োজন, তা আমাদের কারোরই নাই। সেটা আমাদের আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীরও নাই, সরকারেরও নাই। ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে আমরা প্রতি নিয়তই দেখি, যারা স্বর্ণ বহন করে তারা ধরা পড়ে। কিন্তু যারা এর মূল হোতা তাদের কে আমরা ধরা পড়তে দেখি না। তারা সবসময় ছিল ধরা ছোয়ার বাইরে। পারি না বা পারবো না একারণে যে, তাদের আছে শত কোটি টাকার ব্যবসা বাণিজ্য। তাই আমাদের উচিত মূল হোতাদের ধরার ব্যবস্থা করা। এটা করতে কিন্তু খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই।
আমরা যদি যে সকল বড় বড় জুয়েলারী দোকান আছে, সেখানে নিয়ে গিয়ে তলাশি চালাই, তাহলে দেখবো কত সমস্যা বের হয়। একটি ঘটনাতো আমাদের সবার মনে থাকার কথা, আপন জুয়েলার্সের কথা। কিন্তু আমরা শুধু আপন জুয়েলার্স নিয়ে পড়েছিলাম, বাকি যেগুলো আছে সেগুলোর কি হলো? তাই আমাদের সবার মধ্যে সবার আগে ভাল একটি আন্তরিকতার মন মানসিকতা ঠিক করতে হবে। যদি আমাদের মানসিকতায় কাজের প্রতি আন্তরিকতা আনতে পারি, তাহলে ঠিক করতে পারবো আমাদের দেশ ও সমাজকে। নইলে আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় খবর তৈরী করবে আর আমার মত সাধারণ পাঠকেরা শুধু পাঠ করবে।
পরিচিতি : সাবেক আইজিপি/মতামত গ্রহণ : শাখাওয়াত উল্লাহ/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ