শাবি ক্যাম্পাসে ড. জাফর ইকবালকে হত্যাচেষ্টা
সিলেট ও শাবি প্রতিনিধি : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল বিকালে প্রকাশ্যে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। বিকাল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে মঞ্চে ওঠার সময় পেছন থেকে মাথায় ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তার অস্ত্রোপচার চলছে। তার অবস্থা ‘আশঙ্কামুক্ত’ বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, হামলার পর হাসপাতালে নেওয়ার সময় মাথা থেকে রক্তক্ষরণ হলেও কথা বলছিলেন ৬৪ বছর বয়সী এই শিক্ষক। জঙ্গিদের হামলার অন্যতম লক্ষ্য জাফর ইকবাল কয়েক বছর ধরে পুলিশ পাহারা পেয়ে আসছেন। ইলেট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ফেস্টিভ্যাল চলছিল ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি এরপর পৃষ্ঠা ২, কলাম ১
ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জাফর ইকবাল। সেখানেই তার উপর হামলা হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী বলেন, “বিকাল ৫টায় মঞ্চে ওঠার সময় পেছন থেকে মাথায় ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়।” বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জহির উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “মঞ্চের পেছন থেকে এসে এক ছেলে ছুরি মারে গলা, বুক ও মুখের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশসহ অন্যরা তাকে আটক করে।”
তবে হামলাকারী একাধিক ছিল নাকি একজনই ড. ইকবালের ওপর হামলা চালিয়েছে তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের জালালাবাদ জোনের সহকারি কমিশনার মুনাদির ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, ড. জাফর ইকবালের মাথায় ছুরিকাঘাতকারী তরুণকে আটক করা হয়েছে। হামলার ঘটনার পরপরই তাকে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ও উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ধরে ফেলে। উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা তাকে ধরার পর মারধর করেছে। হামলাকারী আহত হয়ে অজ্ঞান অবস্থান আছে। তার বয়স আনুমানিক ২০-২৫। তবে এখনও তার পরিচয় জানা যায়নি। জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, হামলাকারীকে শাবি ক্যাম্পাসেই পুলিশ হেফাজতে আটক রাখা হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকায় গতকাল শুক্রবার ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান চলছিল। গতকাল বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে এর উদ্বোধন করেছিলেন ড. জাফর ইকবাল। গতকাল শনিবার বিকালে এর সমাপনী অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চ এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
ড. জাফর ইকবাল বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং তড়িৎ কৌশল বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন ‘এ’-এর সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ-মিছিল করছেন ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা। কী কারণে ড. জাফর ইকবালের উপর এই হামলা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। এতে জঙ্গিদের হাত থাকতে পারে বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে। ড. জাফর ইকবাল বরাবরই জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ। কয়েক বছর আগে লেখক, অধ্যাপক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের উপর জঙ্গি হামলার সময় জাফর ইকবালও হুমকি পাচ্ছিলেন। তখন তার পাহারায় পুলিশ মোতায়েন করে সরকার।
জাফর ইকবালের পেছনেই দাঁড়িয়েছিল হামলাকারী: ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলার বেশ আগে থেকেই তার পেছনে দাঁড়িয়েছিল হামলাকারী যুবক। ঘটনার পরপরই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষার্থীর তোলা ছবি থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। জানা গেছে, বৃষ্টির আশঙ্কায় সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সমাপনী দিনের অনুষ্ঠানে পাঁচ মিনিটের জন্য বিরতি দেওয়া হয়েছিল। অনুষ্ঠান বিরতির ওই সময়েই বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলা হয়।