রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশও একটি শক্ত অবস্থানে আছে
ড. দেলোয়ার হোসেন
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বাংলাদেশ মিয়ানমারের ঝামেলা চলছেই। বাংলাদেশ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাদের দেশের ভিতরে সেইফ জোন তৈরি করার কথাও বলেছে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ তো একটি আক্রমনাত্মক অবস্থার মধ্যেই আছে। তার পরেও যেহেতু মিয়ানমার একটি সমস্যা তৈরি করেছে বলে, মিয়ানমার বাংলাদেশের সাথে একটি দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনা করছে। মিয়ানমার অতীতেও এমন সৈন্য সমাবেশ করেছে। যেহেতু মিয়ানমার একটি স্বাভাবিক রাষ্ট্র নয়, গত ৭ বছর সেখানে সামরিক শাসন চলেছে, তারা কোন প্রকার বিনা উস্কানিতেই এ ধরনের ঘটনা গুলো ঘটায়।
এবারের ঘটনায় এটা মনে হচ্ছে, তারা সমাবেশ করে রোহিঙ্গাদের মনে একটি ভীতি তৈরি করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশেকেও তারা কিছুটা উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ যেন তাদের বিরুদ্ধে একটি আক্রমনাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কোন কারণে বাংলাদেশকে উত্তেজিত করতে পারলে, বাংলাদেশের সাথে যদি তাদের কোনপ্রকার বিরোধ তৈরি হয়, তাহলে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আর আলোচনা হবে না এবং এটি একটি দীর্ঘ মেয়াদী স্থায়ী সমস্যা হিসেবে রূপ নিবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তো কোন কিছু করতে পারছে না। তারা তো জাতিসংঘের মাধ্যমে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তারা নিজেরা দ্বিপাক্ষিক ভাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিছুই করছে না। বরং উল্টো চীন এবং রাশিয়া তাদেরকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশই দ্বি-পাক্ষিক পর্যায়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এক প্রকার চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে যদি তারা মিয়ানমার ইস্যু থেকে সরাতে পারে, তাহলে রোহিঙ্গা ইস্যুটি একটি স্থায়ীভাবে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়। এতে তারা কুটনৈতিকভাবে লাভবান হয়। তারা চাচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যুটা যেন কোনভাবেই তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে না পারে। বাংলাদেশের দিকে তারা রোহিঙ্গাদের পাঠিয়ে দিয়েছে, যাতে বাংলাদেশেই তারা থাকুক এবং না যেতে পারে।
এসব কারণেই, এটি উস্কানির একটি বিষয় এবং রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে এক ধরনের নজর সরানোর একটি পায়তারা তারা করছে। এটা তাদের আক্রমনাত্মক আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ। এ ধরনের আচরণ তারা আগেও করেছে। তারা একটি বার্তা দিতে চাচ্ছে যে, কোন আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তারা নতি স্বীকার কারছে না। তাদের রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে যে অবস্থান, সে অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়নি। তারা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে সত্যিকার অর্থে কোন আগ্রহী নয়। তবে এখান থেকে তারা আলোচনা করছে এবং এক ধরনের কমিটমেন্ট করছে। এটা আসলে তাদের এক ধরনের কৌশল। একদিকে তারা কূটনৈতিক আলোচনা করছে, আরেকদিকে সামরিক শক্তি সীমান্তের কাছে নিয়ে আসছে। তারা মুলত রোহিঙ্গাদের কে ভয় ভীতি দেখানোর জন্য এবং বিশ্বের সামনে দেখানো যে, আমরা এখনো শক্ত অবস্থানে আছি এবং আমরা নতি স্বীকার করছি না। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ পর্যায়েই তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে অন্য কোন সরকার থাকলেও এখানে কিছু করতে পারত না।
বাংলাদেশ বরং খুবই আক্রমনাত্মক অবস্থানে কাজ করছে। বাংলাদেশ কোন বিনয়ী ভাব দেখাচ্ছে না, রোহিঙ্গা ইস্যুতে যতো ধরনের শক্ত অবস্থান নেওয়া দরকার বাংলাদেশ নিচ্ছে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে, এ ঘটনার জন্য মিয়ানমারই দায়ী, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি সেইফ জোন তৈরি করা দরকার। এ ধরনের কথা যখন বাংলাদেশ বলে, তখন আর বিনয়ী হওয়ার কোন বিষয় থাকে না। এখানে মিয়ানমার যেমন শক্ত অবস্থানে আছে, বাংলাদেশও তেমনি একটি শক্ত অবস্থানে আছে। মিয়ানমার বাংলাদেশ পতাকা বৈঠক করেছে। তারা পতাকা বৈঠক করছে এটাই তো বেশি। তারা তো আলোচনা করছে। আলোচনা করার উদ্যেশ্যেই তো তারা সামরিক বৈঠক করছে, তারা তো এত ভালো রাষ্ট্র নয়। আলোচনার সাথে সাথেই তো তারা রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিবে না।
পরিচিতি : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ঢাবি./মতামত গ্রহণ : মাহবুবুল ইসলাম/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ