ইন্দো-প্যাসিফিকে নতুন নৌ-জোটের সম্ভাবনা
সান্দ্রা নন্দিনী: ব্রিটিশ জনবল ও ইউনিটের সমন্বয়ে ফরাসি ‘জ্যাঁ ডি আর্ক’ নৌ টাস্ক ফোর্স পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ প্যাসিফিক রওনা হয়েছে। প্যারিস ও লন্ডন বলেছে, তাদের নৌবাহিনীর মধ্যে সামুদ্রিক সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে পাঁচ মাসের জন্য এই মোতায়েন ঘটেছে। বাস্তবে এই উদ্যোগকে অভিহিত করা যায় চীনের সামরিক তৎপরতার বিরুদ্ধে এই অঞ্চলের চলাচলকে উন্মুক্ত রাখতে মার্কিন প্রয়াসের প্রতি ইউরোপিয়ান দুই দেশের সমর্থন হিসেবে। ইন্দো-প্যাসিফিকে নৌ উপস্থিতি জোরদার করার কাজে ব্যস্ত ফ্রান্স ও ব্রিটেন।
টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বার্ষিক ‘জ্যাঁ ডি আর্ক’ প্রশিক্ষণ ও টহল মিশনে রয়্যাল নেভির অংশগ্রহণ দেখা গেল। টাস্ক ফোর্স গ্রুপে রয়েছে মিস্ট্রাল-শ্রেণীর হেলিকপ্টার অ্যাসাল্ট শিপ ডিক্সমাড, লা ফেয়েতে-শ্রেণীর ফ্রিগেট সারকফ।
রয়্যাল নেভির দুটি ওয়াইল্ডক্যাট হেলিকপ্টার টাস্ক ফোর্সের উড্ডয়ন শক্তিতে ভূমিকা পালন করছে। এতে দুটি ফরাসি গ্যাজেলে ও দুটি স্প্যানিশ কাগারও রয়েছে। ফরাসি নৌবাহিনীকে সতায়তা করছে রয়্যাল নেভির ৪০ সদস্য ও রয়্যাল মেরিন ট্রুপস, ৫০ জন মার্কিন মেরিন। কয়েকজন স্প্যানিশ ক্রুও আছে এই দলে।
ভারত মহাসাগরে মোতায়েন শেষে আরেকটি ফরাসি নেভাল গ্রুপ দেশে ফিরছে। মিস্ট্রাল-শ্রেণীর উভচর অ্যাসাল্ট শিপ টনেরে ও হরাইজোন-শ্রেণীর বিমান প্রতিরক্ষা ডেস্ট্রয়ার শেভালিয়ার সম্প্রতি জিবুতিতে মার্কিন নৌবাহিনীর সাথে মহড়া সম্পন্ন করেছে। এটি ছিল ‘বরিস বেলেউ ১০০’ মিশনের অংশবিশেষ। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার নৌবাহিনীর সাথেও তারা সম্প্রতি মহড়া চালিয়েছে।
ব্রিটেনের রণতরীও ইতোমধ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক সফরে বের হয়েছে। রয়্যাল নেভির রয়েছে এইচএমএস সাদারল্যান্ড, টাইপ ২৩ অ্যান্টি সাবমেরিন ফ্রিডেট। এটি অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করে ‘ওশ্যান এক্সপ্লোরার’-এ অংশ নিচ্ছে। দেশে ফেরার পথে রণতরীটি দক্ষিণ চীন সাগরে প্রবেশ করেছিল।
‘জ্যাঁ ডি আর্ক’ কনভয় নৌবহরটি দক্ষিণ প্যাসিফিকের দুই ফরাসি দ্বীপ নিউ ক্যালেডোনিয়া ও ফরাসি পলিনেশিয়া পর্যন্ত অগ্রসর হবে। এটি জার্কাতা, বালি, ডারউইন, সিয়াগন ও সিঙ্গাপুরে পোর্ট কল করবে।
উল্লেখ্য, চীনের প্রতি বৈরী দেশগুলোতেই ফরাসি-নেতৃত্বাধীন টাস্ক ফোর্স নোঙর করবে। চীনের দক্ষিণ চীন সাগরের দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও ভিয়েতনাম। সিঙ্গাপুর ওই সাগরের মালিকানা দাবি না করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সাথে নিরপত্তা চুক্তি করেছে।
দক্ষিণ চীন সাগরে তার প্রতি বৈরী দেশগুলোর নৌ কার্যক্রমের বিরোধী চীন। কিন্তু ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য বলছে, তারা ওই অঞ্চলে নৌ চলাচলে স্বাধীনতা বজায় রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ফরাসি ও ভারতীয় সামরিক বাহিনী একে অপরের স্থাপনায় প্রবেশের সুযোগ পেতে চুক্তি চূড়ান্ত করছে। দিল্লি ও ওয়াশিংটন গত বছর এ ধরনের চুক্তি করেছিল। লন্ডন ও প্যারিস উভয়েই টোকিও ও ক্যানবেরার সাথে সামরিক সহযোগিতা জোরদার করছে।
ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে ফ্রান্স ও ব্রিটেনের ক্রমবর্ধমান মোতায়েনের লক্ষ্য হলো চীনকে সংযত রাখার মার্কিন প্রয়াসকে সমর্থন করা। প্যারিস ও লন্ডন ইতোমধ্যেই বেইজিংয়ের ভূ-রাজনৈতিক সম্প্রসারণের নিন্দা করেছে। ইন্দো-প্যাসিফিকে চীনা সামরিক শক্তি বৃদ্ধিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া ইতোমধ্যেই চার জাতি জোট গঠন করেছে। এতে ফ্রান্স ও ব্রিটেনও যোগ দিতে পারে।
এতে করে জোটের শক্তি বাড়বে। তারা লোহিত সাগর ও পূর্ব আফ্রিকাতেও তাদের অবস্থান জোরদার করতে পারবে। ক্রমবর্ধমান সামরিক ও ভূ-রাজনৈতিক সামর্থ্য ছাড়াও এই জোট চীনকে কঠোরভাবে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে। সাউথ এশিয়ান মনিটর