জাফর ইকবালের হামলাকারী জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী : র্যাব
মাসুদ আলম ও আশরাফ চৌধুরী রাজু (সিলেট) : ‘ভূতের বাচ্চা সোলায়মান’ উপন্যাস লিখে নবী সোলায়মান (আ.)-কে ব্যঙ্গ করায় জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে হামলাকারী ফয়জুর হাসান ওরফে ফয়জুল ওরফে শফিকুর। সে বলেছে, জাফর ইকবাল ইসলামের শত্রু, তাই তাকে হত্যা করার জন্য হামলা করেছি। উনি নিজেও নাস্তিক এবং অন্য সবাইকেও নাস্তিক বানানোর জন্য প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। তার লেখা পড়ে মানুষ বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ছে বলে র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে ফয়জুর।
র্যাব-৯ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলি হায়দার আজাদ আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, আক্রমণের পরপরই ধরা পড়ে যাওয়া যুবক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য দিয়েছে যে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালকে সে ‘ইসলামের শত্রু’ মনে করে এবং জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী হয়েই সে এ হামলাটি করেছে।
তিনি জানান, ফয়জুল হাসানের বয়স ২৩, তার বাবার নাম হাফেজ আতিকুর রহমান। সিলেট শহরের শেখপাড়ায় চাচার বাড়িতে তাদের অবস্থান, তবে তাদের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার ধলঘাট গ্রামে। ফয়জুল সিলেট শহরে এবং অন্যত্র একাধিক মাদ্রাসায় পড়েছে।
শনিবার হামলার ঘটনার রাতেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফয়জুরের চাচা আবদুল কাহার, মামা সুনামগঞ্জ জেলা কৃষকলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলুর রহমান এবং ফয়জুল যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো তার মালিককে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক র্যাবকে বলেছেন, গত জানুয়ারি মাসে ফয়জুর কাজ ছেড়ে দেয়।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) হামলার ঘটনায় গতকাল রোববার ফয়জুরকে প্রধান আসামি করে সিলেট জালালাবাদ থানায় মামলা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঘটনার পর থেকে ফয়জুরের বাসা তালাবদ্ধ রয়েছে। এ ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৯ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলী হায়দার আজাদ বলেন, ফয়জুলের সিলেটের কুমারগাঁওয়ের শেখপাড়ার বাড়ি থেকে তারা বিভিন্ন ধরনের ইসলামি বই ও বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করেছে। তার কাছ থেকে র্যাব বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেয়েছে। ইতোমধ্যে র্যাব তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ ধরনের হামলা কেউ একা করতে পারে না। তার সঙ্গে আরও কেউ ছিল বলে আমরা ধারণা করছি। তবে জিজ্ঞাসাবাদে ফয়জুর র্যাবকে জানায়, সে একাই এ হামলা চালিয়েছে। তার কাছ থেকে একটি চাকু ও চাবির রিং পাওয়া গেলেও পায়ে হেঁটে ক্যাম্পাসে গিয়েছিলো সে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আরও বলেন, তার সঙ্গে আর কারা জড়িত সেগুলো তদন্ত করে দেখছে র্যাব। তাকে সিলেট মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। হামলার ঘটনার মূল বিষয়টি দেখবে পুলিশ। আর পুলিশের পাশাপাশি আলোচিত এ ঘটনার ছায়া তদন্ত করবে র্যাব। ফয়জুরের পরিবারের কাউকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদের সন্ধানের জন্য কাজ চলছে। ফয়জুর সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানার কালিয়াকাপন গ্রামের বাসিন্দা। সদর উপজেলার টুকেরবাজারের মাদ্রাসার শিক্ষক হাফিজ আতিকুর রহমানের ছেলে।
গতকাল রোববার বিকালে ফয়জুরকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায় তার চিকিৎসা চলছে।
বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি : হামলার প্রতিবাদে গতকাল ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। হামলার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদার, বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ও ক্যাম্পাসের সীমানা প্রাচীর নির্মাণসহ বিভিন্ন দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে সোমবার থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে শাবি শিক্ষক সমিতি। রোববার দুপুরে শিক্ষক সমিতির এক বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডীন ড. মোহম্মদ গনি এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সম্পাদনা : ইকবাল খান