বঙ্গবন্ধুর ১৯ মিনিটের ১১০৮ শব্দের সেই ভাষণটি পৃথিবীর অদ্বিতীয় দলিল
জামান মুকু
বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশী আলোচিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। আলোচনার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। দীর্ঘদিন পর হলেও এটি পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তাই দেশব্যাপী আলোচনায় এসেছে এটি। সম্পূর্ণ অলিখিত এ ভাষণটি পৃথিবীর লাঞ্ছিত-বঞ্চিত মানুষের মাঝে অনেক আগেই স্বীকৃতি নিয়েছে, এখন ‘ইউনেস্কো’র এ স্বীকৃতি হচ্ছে একটি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মাত্র।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এ ভাষণটি ছিল বিশ্বের শোষিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত-লাঞ্ছিত মানুষের সার্বজনীন মুক্তির একটি দলিল। ভাষণ নিয়ে কথা উঠলে বিশ্বের বহু ব্যাক্তিত্বের ভাষণের কথা আসতে পারে। যেমন-আব্রাহান লিংকন, জর্জ ওয়াশিংটন, পেট্রিক হেনরী, জন এফ কেনেডি, কিং মার্টিন লুথার, নেলসন ম্যান্ডেলা, মহাত্মা গান্ধীসহ বিশ্বের বিভিন্ন নেতা-নেত্রীর ভাষণ। কিন্তু এর সাথে ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণের কোন মিল নেই। কেননা, অন্যান্য নেতা-নেত্রীর ভাষণের প্রেক্ষাপট ও ধরন ছিল পৃথক। বিশ্বের অন্যান্য নেতারা লিখিতভাবে ভাষণ দিলেও বঙ্গবন্ধু সম্পূর্ণ মৌখিকভাবে গুছিয়ে গুছিয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন। তাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের সেই ১৯ মিনিটের ১১০৮ শব্দের ভাষণটি পৃথিবীর অদ্বিতীয় একটি দলিল। এ ভাষণে তিনি অল্প কথায় তৎকালীন সময়ের বাঙালী জাতির সমস্যা সংকট ও সম্ভাবনার বিষয় তুলে ধরেছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ওই ঐতিহাসিক ভাষণে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির কথা স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করেছিলেন। আমরা আজ রাজনৈতিক মুক্তি অর্জন করলেও অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি পুরোপুরি এখনো লাভ করতে পারিনি। তার জন্য আমাদের এখন নিরন্তর সংগ্রাম চালাতে হবে। এই অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
সঠিক ও সত্য ইতিহাস জানতে আমাদের উদ্ধুদ্ধ হতে হবে। প্রকৃত ইতিহাস জানতে কার্পন্য করলে চলবে না। মূলত আমরা জানি না বঙ্গবন্ধু কী ছিলেন। আমাদের শিশু-কিশোর-ছাত্র-যুবক কেউ জানিনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ-চরিত্র। তাহলে কীভাবে জাতির উন্নতি হবে। জাতির জনককে চিনতে না পারলে পিতৃত্বহীন জাতির মতই তো আমাদের স্বভাব হবে! তাই আমাদের শিশুদের জানতে হবেÑ বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেই খোকা যিনি শিশু থাকা অবস্থায় তাঁর পরনের শার্ট আরেকজনকে দিয়ে এসেছিলেন, নিরন্ন মানুষের মাঝে তিনি তাঁর বাবার গোলার ধান বিলিয়ে দিয়েছিলেন। কিশোরদের জানতে হবেÑ বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেই কিশোর, যিনি তখন স্কুলের ছাত্র থাকা অবস্থায় শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের পথরূদ্ধ করে বিদ্যালয়ের ছাদ মেরামতের দাবীর কথা নিঃসংকোচে উত্থাপন করেছিলেন। ছাত্রদেরকে অবশ্যই জানতে হবেÑ ছাত্র মুজিব ছিলেন তিনি, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত হয়েছিলেন। একইভাবে পুরো জাতিকে জানতে হবে বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেই রাষ্ট্রনায়কÑ যিনি স্বাধীনতার মাত্র ১ বছরের মধ্যে বিশ্বনন্দিত একটি সংবিধান আমাদের জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন। যেখানে কৃষক-শ্রমিকের মুক্তি, নারী অধিকার ও আইনের দৃষ্টিতে সমতার কথা সাবলীলভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এসব সত্য এবং সত্য ইতিহাস না জানলে জাতি হিসেবে আমাদের দৈন্যতা কোথায় পৌঁছাবে তা আল্লাহ মালুম। আমরা মুক্ত ও উদার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে যে কেউ যে কোন রাজনৈতিক দলে সম্পৃক্ত বা সমর্থন করতেই পারি। কিন্তু ইতিহাসের এই নির্মোহ সত্য সবাইকে স্বীকার করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, দেশের স্বাধীনতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রশ্নে সবাইকে এক থাকতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিষ্ট
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ