পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ছাড়া কাদা ছোড়াছুড়ি থামবে না
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী
আমাদের দেশের রাজনীতিতে কাদা ছোড়াছুড়ি এতটাই নি¤œ পর্যায় আছে যা বলার মত না। জাফর ইকবাল সাহেবের উপর হামলা একটি নিন্দাজনক কাজ। কিন্তু গোটা বিষয়টার উপর নজর দিয়ে দেখা যাবে, তার নিরাপত্তার জন্য তিন বা চার জন পুলিশ কর্মকর্তা দায়িত্বশীল ছিলেন। কোন কোন কাগজে সংখ্যাটি চারজন আবার কোন কাগজে তিনজন। যে সকল ছবিগুলো ছাপা হয়েছে, তাতে আমরা দেখতে পেয়েছি যে, তারা মোবাইল ব্যবহার করছে। হয়ত তারা ফেসবুক বা গেম খেলছিল বলে আমাদের ধারণা। কারণ, তারা মোবাইল কানে দিয়ে নয় বরং তারা মোবাইল হাতে নিয়ে নাড়ছিল। তাদের অবস্থান ছিল জাফর ইকবাল সাহেবের একটু ডান পাশে। সরাসরি পিছনে না কেন? ফলে কি দাড়ালো? এত কাছে পুলিশ যেতে পারে না অথচ হামলাকারী যেতে পারে। এরা আওয়ামীলীগের লোক না হলে এত কাছে যেতে পারার কথা না। একজন অচেনা লোককে কিভাবে তার পিছনে দাড়াতে দেয়, তা আমার বুঝে আসে না। নাকি এরা আশে পাশের মানুষগুলোর পরিচিত মুখ ছিল। তার পর যখন তাকে গন পিটনি দিলো, তখন কিন্তু পুলিশ তাকে গণ পিটুনীর হাত থেকে রক্ষা করেছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে জাফর সাহেব নাকি সোলায়মান নবীকে নিয়ে কি কটাক্ষ করেছেন। তাই সে তার উপর হামলা করেছে। কিন্তু আমরা দেখেছি যে, তার পরিবারের অনেক সদস্য আওয়ামীলীগের কর্মী। এখন বলেন কোন বিষয়টি সত্য?
যখনই কোন বড় ঘটনা ঘটে তখনই সরকার একটি পুতুল সামনে আনে। যার ফলে মূল বিষয়টার ভিত্তিটাই নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং এখানেও জাফর ইকবালের সাথে এধরণের কোন ঘটনা ঘটছে কি-না তা বলা যায় না। কারণ, তা একেবারেই ভিত্তিহীন বিষয় বলে উড়িয়ে দেয়া যায় না। আমরা প্রায়সই দেখি, এধরণের ঘটনায় প্রকৃত হামলাকারী বা ষড়যন্ত্রকারীদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না। তাকে ধরে যদি প্রকৃত ঘটনার দ্বার উম্মোচন করা যেত, তাহলে এধরণের অনেক ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি হতো না। কিন্তু তা না করে আমাদের নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করে সমস্যার সমাধানকে আরো জটিল করে তুলে বা কোন কিছু আড়াল করার জন্য এটাকে ব্যবহার করে। সুতরাং এখন আমাদের দেশের আওয়ামীলীগের লোকজন বলেই থাকেন যত দোষ নন্দ ঘোষ। যা কিছু ঘটুক বিএনপি এর সাথে জড়িত বলে চালিয়ে দেয়। সুতরাং এর সাথে বিএনপির কী সম্পর্ক তা বুঝে আসে না। এখন একটি কাজ করেন তাহলে, বিএনপির গোটা বিশেক লোক ধরে জেলে পুড়ে দেন। তাহলে কী জাফর ইকবালের উপর হামলাকারীদের মূল খুজে পাওয়া যাবে? মাঝে মাঝে কিছু কথা বার্তা নিজের কাছে বেসামাল বলে মানে হয়। কোন কথার সাথে কোন কথা খাটে, সেটাও মনে হয় বুঝেন না, নাকি? সুতরাং একথাগুলো একটু অবাঞ্চনীয়। তাই এই কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করা প্রয়োজন। এটি একটি রাজনীতির অংশে পরিণত হয়েছে। আসলে যে উচ্চমানের মানসিকতা নিয়ে রাজনীতি করা প্রয়োজন তা আসলে কারোরই নাই। তাই এখন রাজনীতিতে প্রয়োজন পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালবাসা, সম্মান। প্রত্যেকের আদর্শের প্রতি সম্মান করা, প্রত্যেকের কাজ দিয়ে তাকে সম্মান করা। ফলে এগুলো না থাকলে এই কাদা ছোড়াছুড়ি কখনোই থামবে না।
পরিচিতি : কলামিষ্ট ও সম্পাদক/ মতামত গ্রহণ : শাখাওয়াত উল্লাহ/ সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ