একটি রাজনৈতিক নির্দেশে রাষ্ট্রের পরিবর্তন হয়
রবিউল আলম
সমাজ উন্নয়নের প্রধান শক্তি রাজনীতি, রাজনীতি ছাড়া সমাজ ও রাষ্ট্রের কোন পরিবর্তন করা যায় না। ভালো হোক, আর খারাপ হোক আজও রাজনীতির বিকল্প কিছু আবিস্কার করা সম্ভব হয়নি। রাজনীতি ছাড়া জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার আর কোন মূলমন্ত্র আবিস্কার হয় নাই। রাজনীতি মহামানবদের, রাজনীতির আদর্শ ও উদ্দেশ্য থাকবে, তবে লক্ষ্য থাকতে হবে দেশ ও জাতির মঙ্গল। নেতারা তাদের চিন্তা-ভাবনা জনগণের মাঝে বিলিয়ে দেবেন, জনগণ তা গ্রহণ করলে এবং সরকার না মানলে সরকারকে মানাতে একের পর এক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর মাধ্যমে সরকারকে দাবী মানতে বাধ্য করাবেন, এতে নেতার জেল-জুলুম ফাঁসি সবই হতে পারে। রাজনীতি যারা করে তাদের জীবনের মায়া ও সংসারের পিছুটান থাকলে কি আর রাজনীতি করতে পারবে ? বর্তমান রাজনীতির ধরন সম্পূর্ণ আলাদা। দেশের জন্য, জাতির জন্য কোন চিন্তা চেতনা নাই, জনগণের কোন মতামত নাই, তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই, নিরপেক্ষ সরকার চাই, সহায়ক সরকার চাই, মামলা মোকদ্দমা প্রত্যাহার চাই, সমান অধিকার চাই, তিনশত আসন চাই ইত্যাদি, ইত্যাদি দাবীর কোন শেষ নাই। কার কাছে দাবী, কোন ক্ষমতায় কে পূরণ করবে জানা নাই। আমার জীবনে শুনি নাই, আমার প্রাপ্য ক্ষমতা আমি অন্যের হাতে তুলে দিব স্বেচ্ছায়। দাবী করলে এবং পাকিস্তান সরকার দয়া করে কি আর আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে যেত। সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালি যদি জেগে না উঠতো, তাহলে স্বাধীনতা অর্জন হতো না। এখানে একট বিষয় পরিস্কার যে, একটি রাজনৈতিক হুকুম ও নির্দেশের জন্য ২৩ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য। বাংলার আকাশ-বাতাসে স্বাধীনতার উচ্ছাসে রাজপথে বেরিয়ে আসলো সমগ্র জনগণ, মুখে মুখে জয়বাংলার স্লোগান এই অগ্নিঝরা মার্চ মাসে। মুজিবের মুখে উচ্চারিত হল – এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, তোমাদের যার যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকবা। নেতার প্রয়োজন হয় নাই, একটি হুকুমেই বাংলার আকাশ বাতাস পরিবর্তন করে দিয়েছে জনগণ। জনগণের মতামত নিয়ে রাজনীতির দাবী আদায় করতে নেতার প্রয়োজন হয় না, একটি রাজনৈতিক হুকুম ও নির্দেশনা সমাজ ও রাষ্ট্র পরিবর্তনে যথেষ্ট। এখন খালেদা জিয়া জেলখানায়, কিন্তু জনগণের মাঝে কোন প্রতিক্রিয় নাই। না থাকারও অনেকগুলো কারন রয়েছে। খালেদা জিয়ার দাবীতো জনগণের জন্য নয়, খালেদা জিয়ার দাবী হলো ছেলেকে মুক্ত চাই, ক্যান্টনমেন্টের বাড়ী ফেরৎ চাই, ক্ষমতার মসনদে বসতে চাই, এতিম হোক আর গরীব হোক প্রচুর টাকা চাই। রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটি হুকুম দিয়েছিল – গাড়ী, বাড়ী দেশ জ্বালিয়ে দেবার জন্য, ব্যাস এক হুকুমেই বিএনপি-জামাত শত শত কোটি টাকার সম্পদ জ্বালিয়ে দিল, হাজার হাজার মায়ের বুক খালি করে দিল, প্রাণ গেল নিজের দলের সহ শান্তিপ্রিয় জনগণের। এখন আর খালেদা জিয়ার হুকুমে হরতাল, অবরোধ, ধর্মঘট হয় না, জনগণ এই হুকুম আর মানে না। শান্তিপ্রিয় জনগণ উন্নয়ন চায়, বহির্বিশ্বে বাঙ্গালির মাথা অনেক উঁচু হয়েছে এবং আরো উঁচু করে চলতে চায়। চুরির দায়ে খালেদা জিয়া জেলে রয়েছে, এই দায়িত্ব জনগণ নিতে চায় না। জনগণও টাকা চুরির দায় থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় না, দাবী আদায় করবে কে ? দলের বড় বড় নেতারা খালেদা জিয়ার ধমক, হুমকি-ধমকি থেকে মুক্তির লক্ষ্যে বুদ্ধি দিয়েছে, ম্যাডাম আপনি জেলে গেলে আপনার জনপ্রিয়তা বাড়বে, জনগণের আপনার প্রতি সহমর্মিতা বাড়বে। নেলসন ম্যান্ডেলা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু জেলে থেকে রাজনীতি করেছে দেখেন নাই। জেল ছাড়া কি আর রাজনীতি হয়। তারেক জিয়ার হুমকি-ধমকি শুরু হয়ে গেছে। বিএনপি’র নেতারা বোঝাবার চেষ্টা করছে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর মাধ্যমে ম্যাডামকে ম্ক্তু করে আনতে হবে, রাস্তায় গাড়ী পোড়ালে, জেলের ভিতরে কি হয় কে জানে। রাজনীতি করার শখ থাকবে, ক্ষমতা ভোগ করবেন, বিদেশ থেকে হুমকি দিবেন কিন্তু দেশে আসবেন না – বিএনপি জামাতের নেতারা ও জনগণ এত বেকুব মনে করছেন কি করে। সবাই ক্ষমতার ভাগ চায়, তলে তলে সরকারের সহযোগিতা চায়, খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে, দল বানিয়ে ক্ষমতার ভাগ নেওয়া হবে। আবুল কালাম আজাদ যদি এমপি হতে পারে (বিএনএফ) তবে এদেশের অনেক জাতীয় নেতা আছে যারা সাইড লাইনে বসে থাকতে চায় না। খালেদা জিয়ার আপোষহীন জেলখানায় আর কেউ থাকতে চায় না। সামান্য জ্ঞান যাদের আছে তারা এতিমের টাকা আত্মসাতের দায় নিজের কাধে নিতে চায় না। দেশের জনগণ না চাইলে হুকুম দিয়ে গাড়ী জ্বালানো যাবে না। ধর্মঘট, অবরোধ, অসহযোগ অনেক পরের কথা। জনগণ দুরের কথা বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মীরাও মাঠে থাকবে না, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী ছাড়া কোন পথ না থাকায় আঙ্গুর ফল টক আমরা খাই না। একটি রাজনৈতিক নির্দেশ জাতিকে মুক্তি দেয়, একটি রাজনৈতিক নির্দেশ জাতির উন্নয়ন ও বহির্বিশ্বে পরিচিতি ও সম্মান অর্জনের পথ দেখায়। অন্যদিকে একটি রাজনৈতিক নির্দেশনা দেশ ও জাতিকে প্রতিহিংসার আগুনে জ্বালায়। একটির বেশি নির্দেশের প্রয়োজন হয় না দেশ ধ্বংস করে দেয়ার জন্য। ডিসেম্বরে নির্বাচন, তাই জাতিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এরুপ রাজনৈতিক মতাদর্শের নির্দেশনার অপেক্ষা করবেন, নাকি নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখবেন। সিদ্ধান্ত জনগণের, আমরা অপেক্ষায় থাকলাম।
লেখক : ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ