হিজাবের ব্যবহারেই বোঝা যায় আমরা বদলে যাচ্ছি
প্রভাষ আমিন
নারীদের আবায়া পড়ার বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়াকেই আমি সৌদি আরবের সাম্প্রতিক নারী জাগরণের ঝড়ের সবচেয়ে বড় ঝাপটা বলছি, কারণ যুগ যুগ ধরে বিশ্ব জুড়ে, বিশেষ করে বাংলাদেশে মুসলিম নারীদের অবগুণ্ঠনের আড়ালে রাখার চেষ্টা হয়েছে, উন্নয়নের মূলধারা বিচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টা হয়েছে। সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা যখন নারীদের বোরকা পড়ার বাধ্যবাধকতা তুলে নেন, তখন বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা আল্লামা শফির নারীদের বিষয়ে ভাবনা কী? আল্লামা শফির কাছে নারী তেঁতুলের মত, যাদের দেখলে তার লালসার লালা ঝরে। তিনি মনে করেন, নারীদের ‘কেলাশ ফোর ফাইভ’ পর্যন্ত পড়লেই যথেষ্ট, যাতে তারা স্বামীর টাকা-পয়সার হিসাব রাখতে পারে। নারীদের উপার্জনকে তিনি মনে করেন হারাম। বাংলাদেশের মুসলমানরা কার কথা মানবেন, সৌদি আরবের ধর্মীয় নেতার নাকি বাংলাদেশের শফি হুজুরের? আমি সবসময় বলি পোশাক মানুষের ব্যক্তিগত পছন্দ। সবারই নিজ নিজ পছন্দের শালীন পোশাক পড়ার অধিকার আছে। কেউ যদি বোরকা পড়েন আমার আপত্তি নেই। ছেলেবেলা থেকেই দেখে আসছি, আমার মা বোরকা পড়েন। আমার আপত্তি নেই। দেখতেও ভালো লাগে। কিন্তু কেউ যদি বোরকা না পড়ে তাতেও আমার আপত্তি নেই। পোশাকের প্রসঙ্গটা আসলো, কারণ ইদানীং বাংলাদেশে এক নতুন ফ্যাশন হয়েছে হিজাব। আগেই বলেছি, পোশাক নিয়ে আমার ছ্যুৎমার্গ নেই। কেউ যদি হিজাব পড়েন; সেটা ধর্মীয় কারণেই হোক আর ফ্যাশনের কারণেই হোক; আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু হিজাবের বহুল ব্যবহারেই বোঝা যায় ভেতরে ভেতরে আমরা বদলে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে মনে হয়, সৌদি আরবের নারীরা যখন অবগুণ্ঠন ছেড়ে বেরিয়ে আসছে, তখন কি আমরা আরো বেশি আড়াল করে রাখছি নিজেদের? সৌদি আরব যখন এগুচ্ছে, আমরা কি তখন পিছিয়ে যাচ্ছি?বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প এলাকায় ভোরবেলায় গেলে যে কারো মন ভালো যাবে। গার্মেন্টস নারী শ্রমিকদের মিছিল যেন বাংলাদেশের অগ্রগতিরই চিত্র। কিন্তু সম্প্রতি সিপিডির এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে গার্মেন্টস খাতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমছে। আমি বলছি না, শফি হুজুরের কথা শুনেই বাংলাদেশের নারী শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দিচ্ছেন। কিন্তু নারী শ্রমিক কমে যাওয়াটা খুবই শঙ্কার। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে নারী-পুরুষ সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। ইদানীং ঢাকার রাস্তায় স্কুটিচালক মেয়েদের সংখ্যা বাড়ছে। এমনকি অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন সেবা ‘পাঠাও’এও নারী চালক আছে। কখনো কখনো দেখি মোটর সাইকেল চালাচ্ছে নারী, পেছনে যাত্রী পুরুষ। ঢাকার রাস্তায় যখন নারীরা সাহসের সাথে মোটর সাইকেল চালিয়ে ধুলা উড়িয়ে চলে যায়, আমার সব শঙ্কাও উড়ে যায়। আমি আশ্বস্ত হই, আমাদের নারীদের কেউ আটকে রাখতে পারবে না।
পরিচিতি : হেড অফ নিউজ, এটিএন নিউজ/ ফেসবুক থেকে