নির্বাচনি রাজনীতি কোন পথে
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : আগামী নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সর্বস্তরে আলোচনা হচ্ছে, আগামী সংসদ নির্বাচন কোন দিকে যাচ্ছে? বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কি না? আর বিএনপি অংশ না নিলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে কি হবে না।
রাজনীতিক ও বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, ১৯৯০ সালে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হলেও জাতীয় নির্বাচনের সময় এলেই নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে অস্থিরতা দেখা দেয়। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মূলত নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে আন্দোলন করে থাকে। এবারও ব্যতিক্রম ঘটেনি। বিএনপি বলছে, তারা বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। তত্ত্বাবধায়ক না হলেও নির্বাচনকালে সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় দলটি। এই দাবিতে দলটি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার হুমকিও দিয়ে আসছে। অন্যদিকে বিএনপি নির্বাচনে আসুক কিংবা না আসুক সময় মতো নির্বাচন করবে এমন কঠোর অবস্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের।
বিপরীতমুখি এই অবস্থানে নির্বাচনকে ঘিরে উৎসবমুখর রাজনৈতিক পরিবেশের পরিবর্তে সংঘাত ও সহিংস পরিস্থিতি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেছেন, এই পরিস্থিতির জন্য বিএনপি দায়ী। তারা জনগণের মুখাপেক্ষী হতে ভয় পায়। তাই নির্বাচনে না যাওয়ার বাহানা করছে। এখানে সমঝোতার সুযোগ নেই। আমরা সময় মতোই নির্বাচন দিবো। তিনি বলেন, এবার বিএনপি নির্বাচনে না এলে দলীয় নেতাকর্মীদের হারাবে। বিএনপি নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে সহিংস আন্দোলনের চেষ্টা করছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন ফারুক বলেছেন, সরকার চায় না বিএনপি নির্বাচন করুক। তাই আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে এবং নেতাকর্মীদের উপর সীমাহীন অত্যাচার নির্যাতন চালাচ্ছে। সরকার ২০১৪ সালের মতো একটি একপেশে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা দখল করতে চায়। কারণ আওয়ামী লীগ জানে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ৩০টির বেশি আসন পাবে না। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচন করতে চায়, সরকারই বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করছে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিএনপির জনসমর্থন আছে। কিন্তু আন্দোলনে জনজোয়ার সৃষ্টি করার মতো নেতৃত্ব নেই। তারা ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর সারাদেশে জ্বালাও- পোড়াও করেছে যা জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। বর্তমানে বা আগামীতে এই ধরনের ‘জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন’ করলে দলটি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে। নির্বাচনে যাবে বিএনপির এমন ঘোষণা দেওয়াই ভালো।
শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, বিএনপির দাবিগুলো সার্বজনীন মনে হয় না। তাদের আন্দোলনে রাজপথে তেমন লোকজন নামছে না। নির্বাচনে না এলে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি সরকারের প্রতি আমার আহ্বান, বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার দিকে নিতে কিছুটা ছাড় দিন। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে প্রয়োজনে সংলাপ কিংবা রাজনৈতিক সমঝোতা হতে পারে। আবুল কাশেম বলেন, বিএনপির ওপর দমন-পীড়ন চলছে। খালেদা জিয়া জেলে। এতে বিএনপি এবং বেগম জিয়ার প্রতি সাধারণ মানুষের সহানুভূতি কাজ করছে। তবে তারা এটা দিয়ে তো গণজোয়ার তৈরি করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ একটি বড় ও শক্তিশালী রাজনৈতিক দল। বিএনপিকে তা মাথায় রেখেই কর্মসূচি নিতে হবে। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির সিদ্ধান্ত স্পষ্ট করার এখনই সময়। সম্পাদনা : ইকবাল খান