বাসা ভাড়া দেখতে এসে নাখালপাড়ায় নারীকে হত্যা
সুশান্ত সাহা : রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়ার ২৮৮ নম্বরের রসুল ভিলার নিচতলার ফ্ল্যাটে নৃশংসভাবে আমেনা বেগমকে হত্যা করে তার সঙ্গে থাকা গলার চেইন, হাতে থাকা স্বর্ণের চুড়ি ও আংটিং খুলে নিয়ে পালিয়ে যায় ঘাতক। হত্যাকা-ের ২৪ ঘন্টা পেড়িয়ে গেলেও কোন ক্লু খুঁজে পায়নি পুলিশ। তবে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে না কী ডাকাতির কারণসহ কয়েকটি বিষয়ে নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
পুলিশ বলছে, এলাকায় কোন সিসি ক্যামেরা না থাকা তদন্ত কাজে সীমাবদ্ধতার একটি বড় কারণ। নাগরিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে সিসি ক্যামেরা যুক্ত করার কথা বলা হলেও তা অনেকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এ ঘটনায় তেজগাঁও থানায় নিহতের ছোট ছেলে বাবু আহম্মেদ বাদি হয়ে মামলা দায়েরে করেন। এদিকে ময়নাতদন্তের শেষে গতকাল শুক্রবার জুমআর নামাজের পর পশ্চিম নাখালপাড়া বড় মসজিদে জানাযা শেষে আমেনা বেগমের মরদেহ বাসার পাশেই পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে ওই বাড়িতে সরিজমিনে দেখা যায়, ভবনের সামনে কম্পিউটারে কম্পোজ করা সাদা কাগজে একটি টু-লেট ঝুলছে। ভেতরে ঢুকতেই নিচতলার দরজার সামনে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ। যে ফ্ল্যাটটিতে আমেনা বেগমকে হত্যা করা হয় সেটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।
তার পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া গৃহবধূ মনি জানান, গত ১ মার্চ থেকে ওই ফ্ল্যাটটি খালি হয়। ঘটনার সময় তিনি ফ্ল্যাটে থাকলেও কোনো শব্দ শুনতে পাননি। আমেনা বেগমের ছোট ছেলের স্ত্রী বর্ষার চিৎকারে শুনে দরজা খুলে বেড়িয়ে খালি ফ্ল্যাটের রান্না ঘরে রক্তাক্ত লাশ পরে আছে দেখতে পায়।
স্বজনরা জানান, ঘটনার সময় ভবনের দ্বিতীয় তলায় আমেনা বেগমের বাসায় শুধুমাত্র ছোট ছেলের স্ত্রী বর্ষা ও ৫ বছরের নাতনী ছিলো। বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে এক যুবক বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে দ্বিতীয় তালার কলিং বেল দেয়। এর সময় ছোট ছেলের স্ত্রী বর্ষা রান্না করছেন। কলিং বেল শব্দ পেয়ে আমেনা বেগম দরজা খুলে দেন। ওই যুবক ফ্ল্যাটটি রুমগলো দেখতে চায় । পরে আমেনা বেগম দ্বিতীয় তলা থেকে চাবি নিয়ে এসে দরজা খুলে ওই যুবককে বাসা দেখানোর জন্য ওই ফ্ল্যাটটির ভেতরে ঢোকেন। প্রায় আধাঘন্টা পর আমেনা বেগমের ছোট ছেলের স্ত্রী বর্ষা শ্বাশুরীকে খুঁজতে এসে নীচ তলার খালি ফ্ল্যাটের রান্না ঘরে রক্তাক্ত লাশ দেখতে পায়। তখন তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়। পরে পুলিশকে খবর দেয়া হলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্যে হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তেজগাঁ ও থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) আমিনুল ইসলাম জানান, এই ঘটনায় অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের ছেলে বাবু আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেছেন। তিনি বলেন, আমরা ঘটনা তদন্ত করছি। তবে এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। আমরা প্রতিবেশী ও পরিবারের লোকজনকে আশপাশের লোকজনের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, বাসা ভাড়া দেখতে এসে স্বর্ণালঙ্কারের লোভে কোনো বখাটে যুবক এ হত্যাকা- ঘটিয়ে থাকতে পারে। এটি কোনো পরিকল্পিত হত্যা কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।