কাঁচা পাটের রপ্তানি কমলেও বাড়ছে এ খাতে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা
স্বপ্না চক্রবর্তী : আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচা পাটের রফতানি কমলেও বেড়েছে পাটজাত পণ্যের রফতানি। বিষয়টিকে দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। পাট উৎপাদনে প্রথম সারির দেশ হওয়ায় কাঁচা পাটের প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে পাটজাত অন্যান্য পণ্যের উৎপাদন দেশের ভেতরেই সম্ভব। আর এর ফলে কাঁচা পাটের চাইতে এর দ্বারা উৎপন্ন পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি। তাই পাট জাত পণ্যের রফতানি বাড়লে পাটের সোনালী দিন খুব শিগগীরই ফিরে আসবে বলে আশা করছেন এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও রপ্তাতানিকারকরা।
বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো কর্তৃক প্রকাশিত ২০১৭- ১৮ অর্থবছরের রপ্তাতানি লক্ষ্যমাত্রা শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিদেশের বাজারে দেশে উৎপাদিত কাঁচা পাটের রফতানি কমেছে ১৭.৫২শতাংশ। কিন্তু উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে পাটজাত অন্যান্য পণ্যের রফতানি। পাটের সুতা এবং জোয়ালের রফতানি বেড়েছে ২২দশমিক ২১শতাংশ, পাটের ব্যাগ এবং পাটের তৈরি অন্যান্য পণ্যের রপ্তাতানি বেড়েছে ১১৯দশমিক ৫০শতাংশ। তবে পাটের তৈরি সুতা এবং জোয়াল রপ্তাতানি কমেছে ৪দশমিক ৭৪শতাংশ। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৭-১৮এর প্রথম ৮মাসে (জুলাইÑ ফেব্রুয়ারী) কাঁচা পাটের রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১১৩দশমিক ৮৮শতাংশ কিন্তু রপ্তাতানি হয়েছে ১০৭দশমিক ৭৯শতাংশ। এছাড়া, পাটের সুতা ও জোয়াল রপ্তাতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪৪২দশমিক ৪৯শতাংশ। এ রপ্তাতানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬৬দশমিক ১৬শতাংশ আর পাটের তৈরি অন্যান্য দ্রব্যের লক্ষমাত্রা ছিলো ৩৯দশমিক ৪শতাংশ। এটি বেড়ে হয়েছে ৬৮দশমিক ৯৯শতাংশ।
এতে করে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মন্তব্য করেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন)। তিনি বলেন, যেহেতু কাঁচা পাটের উৎপাদনে আমাদের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব রয়েছে সেহেতু পাটজাত পণ্যের তৈরি ও সম্প্রসারণে আমাদের কেউ আটকাতে পারবে না। আর কাঁচা পাটের রপ্তাতানি কম হওয়া তো খুবই ভালো কথা। এতে করে আমরা দেশের ভেতরেই পাটের প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে এর দ্বারা বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করতে পারবো। কাঁচা পাটের চাইতে এসব দ্রব্যের দাম তুলনামূলক বেশি হওয়া আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমাদের আয়ও বাড়বে। সরকারও পাটের সোনালী দিন ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ প্রণোদনা দিচ্ছে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, সরকারের পাশাপাশি আমরা যারা ব্যবসা বাণিজ্যের সাথে জড়িত আছি আমাদেরও উচিত এই শিল্পের সোনালী দিন ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ সহযোগীতা করার।
ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু হওয়া পাটশিল্প একসময় ‘সোনালী আঁশের’ মর্যাদা অর্জন করে ১৮৯০এর দশকে। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে এই শিল্পে পতন শুরু হয়। কিন্তু বর্তমানে আবার গ্রীন ইকোনমি, বৈশ্বি তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ন্যাচারাল ফাইবারের চাহিদা ও সরকারের সাহসী পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের ‘সোনালী আঁশ’ আবারো সাফল্যের মুখ দেখবে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের পাটশিল্পকে টিকে রাখতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন করা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি শহীদুল্লাহ চৌধুরী। সম্পাদনা : ইয়াছির আরাফাত