শ্রীলঙ্কায় রেকর্ড গড়ে জয়ে ফিরলো বাংলাদেশ বাংলাদেশি সমর্থকদের উপর হামলা
আক্তারুজ্জামান : টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের ইতিহাসের রেকর্ড গড়া এক জয় পেলো বাংলাদেশ। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে নিদাহাস ট্রফির ম্যাচে ২১৫ রানের প্রায় অসম্ভব এক লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছে টাইগাররা। মুশফিকুর রহিমের ৩৫ বলে ৭২ রানের অবিশ্বাস্য এই ইনিংসে ঘরের মাঠের শ্রীলঙ্কাকে ২ বল আর ৫ উইকেট হাতে রেখে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো দুইশ রান করল বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো দুইশ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতল তারা। এর আগে ২০১৬ সালে খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৬৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ। ঢাকায় গত ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫ উইকেটে ১৯৩ রান করেছিল বাংলাদেশ। সেটাই ছিল টি-টোয়েন্টিতে তাদের সর্বোচ্চ।
অনেকদিন ধরেই সেই চিরচেনা বাংলাদেশকে দেখা যাচ্ছিল না। একটি জয়ই যেন খুঁজছিল পুরো টিম। দেশের মাঠ, বিদেশের মাঠ সব জায়গাতেই শুধু হার আর হার। দলের অধিনায়কের কথা মতো গতকাল ‘ভালো খেলাটাই’ খেললো টাইগাররা। সর্বশেষ এ মাঠেই বাংলাদেশ জিতেছিল। আবারও এ মাঠে জয়ের ধারায় ফিরল বাংলাদেশ।
তবে ম্যাচ শেষে ঘটে এক ন্যাক্কারজনক ঘটনা। গ্যালারিতে থাকা জয়ের উল্লাসে মাতোয়ারা বাংলাদেশি সমর্থকদের উপর হুট করেই হামলা চালান খেলা দেখতে আসা শ্রীলঙ্কান দর্শকরা। এতে মুহূর্তেই হতবিহবল হয়ে পড়েন উপস্থিত সবাই। শ্রীলঙ্কান সমর্থকদের উগ্রতায় এক পর্যায়ে পরিস্থিতি চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ফলে মাঠে দায়িত্ব পালন করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরা দৌড়ে ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। পরে তারাই শ্রীলঙ্কান সমর্থকদের শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। যদিও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন শ্রীলঙ্কার ক’জন সমর্থক।
বৃষ্টির কারণে গতকাল খেলা শুরু হতে ১৫ মিনিট দেরি হয়। টস হেরেও লঙ্কান অধিনায়কের কণ্ঠে ছিল ম্যাচ জয়ের আভাস। দুই কুশলের জুটিতে লঙ্কানরা ডাবল সেঞ্চুরির স্কোর গড়ে নিজেদের নিরাপদ ভেবেছিল। সেই স্কোর লাইনকে হাতের নাগালে এনে দেন তামিমের সঙ্গী হিসেবে ওপেনিংয়ে নামা লিটন দাস। তামিমের সঙ্গে ৭৭ রানের জুটি গড়ার পথে ১৯ বলে ৫ ছক্কা ও ২ চারে তিনি ৪৩ রান করেন।
তামিমের বিদায়ে হঠাৎ করেই একটা চাপ দেখা যায় দর্শকদের মাঝে। সৌম্য ও মুশফিক গড়েন ৫১ রানের জুটি। এরপর বাকি কাজটি সারেন মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ। ২৪ বলেই মুশফিক তুলে নেন টি-২০ ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি। শেষ পর্যন্ত ৩৫ বলে অনবদ্য ৭২ রানে তিনি দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান।
এর আগে উদ্বোধনী জুটিতে ৪.২ ওভারেই ৫৬ রান তুলে ফেলেছিল চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। অবশেষে বিধ্বংসী এই জুটি ভাঙেন মোস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি এই পেসারের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে স্ট্যাম্পই উড়ে যায় ২৬ রান করা দানুষ্কা গুনাথিলাকার। এরপর কুশল মেন্ডিস আর কুশল পেরেরার ৮৫ রানের জুটি ভাঙেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ইনিংসের ১৪তম ওভারে টাইগার অধিনায়কের বলে সাব্বির রহমানের ক্যাচ হয়ে ফেরেন ৩০ বলে ৫৭ করা কুশল মেন্ডিস।
একই ওভারে দাসুন শানাকাকে শূন্য রানে আউট করে বাংলাদেশকে খেলায় ফিরিয়েছেন রিয়াদ। এই ক্যাচটিও নেন সাব্বির। এরপর তাসকিন আহমেদের বলে আরেকটি দুর্দান্ত ক্যাচ সাব্বিরের। এবার আউট ২ রান করা চান্দিমাল। তবে দ্রুত কয়েকটি উইকেট তুলে নিতে পারলেও লঙ্কানদের রানের গতি আটকাতে পারেনি টাইগাররা। শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে মোস্তাফিজকে খেলতে গিয়ে বল উপরে তুলে দেন কুশল পেরেরা। উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ হয়ে ফেরেন ৪৮ বলে ৭৪ রান করা এই ব্যাটসম্যান। একই ওভারে এক বল পরই থিসারা পেরেরাকে শূন্য রানে নাজমুল অপুর ক্যাচ বানান মোস্তাফিজ। উপুল থারাঙ্গা অপরাজিত ছিলেন ১৫ বলে ৩২ রানে। সম্পাদনা : ইমতিয়াজ মেহেদী হাসান