প্যানক্রিয়াস পাথর অপারেশনে নতুন পদ্ধতির আবিষ্কার বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমুর্তি উজ্জল
ইসমাঈল হুসাইন ইমু
অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুর রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোবিলিয়ারী প্যানক্রিয়েটিক সার্জারী বিভাগে কর্মরত। নিজ মেধা দিয়ে তিনি প্যানক্রিয়াস পাথর সার্জারীর নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। ২০১০ সালের ১ জানুয়ারী থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ পদ্ধতির দ্বারা অপারেশন শুরু করেন, যার নাম করণ করেছেন ‘সহিদ পদ্ধতি’ নামে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ১১৬ টি সার্জারী করেছেন। সফলতার হার শতভাগ। বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনফারেন্স যথা এশিয়ায় জাপানের টোকিও , ইন্দোনেশিয়ার বালিতে, ইউরোপের জার্মানিতে, উত্তর আমেরিকার বোস্টনে ও দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলে সফলভাবে উপস্থাপন করেন। এই পাথর চিকিৎসায় পুরাতন অনেক পদ্ধতি বিদ্যমান। পুরাতন পদ্ধতিগুলো সফলতায় যে হার বিদ্যমান, তার চেয়ে সহিদ পদ্ধতির সফলতা অনেক বেশী। পুরাতন পদ্ধতিতে দুটি সংযোগ । এই সহিদ পদ্ধতিতে একটি মাত্র সংযোগ। সময় কম লাগে, রক্তপাত খুবই সামান্য, কোন প্রকার জটিলতা নেই, মৃত্যুর হার শুন্য। পুরাতন পদ্ধতিতে ব্যাথা নিরাময়ের হার মাত্র ৬০-৭০ ভাগ, সেখানে এই সহিদ পদ্ধতির ব্যাথা নিরাময়ের হার ৯৬ ভাগ। সোসাইটি অফ আমেরিকান গ্যাষ্ট্রোইনটেসটিনাল এন্ড এন্ডোসার্জন (সাজেস) এই পদ্ধতির অনুমোদন দিয়েছে, ব্যাপক প্রচার করে চলেছে বিশ্বব্যাপী। তার এই নতুন পদ্ধতি বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমুর্তিকে উজ্জল করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী।
তিনি বিশ্বের অনেক নামী দামী হাসপাতালের খ্যাতনামা সার্জনের সংগে কাজ করেছেন। এদের মধ্যে জাপানের টোকিও ও কিয়োটো মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকার পিটস বার্গ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যানসার কেয়ার সেন্টার অন্যতম। তার গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনার যথা জাপান, ভারত, কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া , জার্মান, আমেরিকায় পঠিত হয়েছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে সফলতার সাক্ষর হিসাবে দেশে মাদার তেরেসা পুরস্কার লাভ করেছেন। ভারতের কোলকাতায় ও তামিলনাড়– থেকে আন্তর্জাতিক সনদ পেয়েছেন। প্যানক্রিয়াস বা অগ্নাশয় পরিপাকতন্ত্রের গুরুত্বপুর্ণ অংগ। খাবার পরিপাকের জন্য এনজাইম প্রয়োজন, যা এখান থেকে তৈরী হয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্রনের জন্য ইনসুলিন প্রয়োজন যা প্যানক্রিয়াসে তৈরী হয়। প্যানক্রিয়াসে অনেক রোগ হয়। যেমন ইনফেকশন, পাথর, টিউমার ও ক্যান্সার প্রভৃতি।
প্যানক্রিয়াস পাথর কেন হয়। অনেক কারণ আছে। আমাদের দেশে দেখা যায়, যে অঞ্চলে গরম বেশী পড়ে সে অঞ্চলে এই পাথর হওয়ার হার অনেক বেশী। যারা মদ পান করেন তাদের মাঝে এর হার বেশী । লক্ষণসমুহ : রোগের লক্ষণ সমুহ যথা পেটে ব্যাথা, বমি, বমি ভাব, ক্ষুধামন্দা, ওজন কমে যাওয়া মুলত ব্যাথা প্রধান কারণ। ব্যথার তীব্রতা এত বেশী যে স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ হয়ে পড়ে। ব্যাথা নিরাময়ের সকল ওষুধ অকার্যকর হয়ে পড়ে । রোগ নির্নয়ে ব্যথা / পেইন স্কোর গুরুত্বপূর্ণ। পেইন স্কোর যদি ১৫ থেকে ২৪ হয় তাহলে সার্জারী করার জন্য উপদেশ দেই। নানাবিধ পরীক্ষা যেমন আল্ট্রাসনোগ্রাফী,সিটি স্ক্যান, এম আর আই রোগ নির্নয়ের প্রয়োজন । এছাড়া ডায়রিয়া, ডায়াবেটিস দেখা দেয়, ক্যানসার হতে পারে।
পরীক্ষা সমুহ-আলট্রাসনোগ্রাফী পরীক্ষার দ্বারা এই রোগ খুব সহজে নির্ণয় করা যায়। এছাড়া পেটের প্লেন এক্সরে করে এই রোগ নির্ণয় করা হয়ে থাকে। আরো উন্নত পরীক্ষা যথা এম আর আই, সিটি স্ক্যান রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ণ।
চিকিৎসা : পাথর হলে সার্জারী-ই একমাত্র চিকিৎসা। অনেক রোগীর পাথরের কারণে ডায়াবেটিস হয়েছে, সার্জারী করার পর দেখা গেল তার ডায়াবেটিস সম্পুর্ণ নির্মুল হয়েছে। ডায়রিয়া ও ভালো হয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এন্ডোসকপি করা হয়ে থাকে। যার হার শতকরা ১০ ভাগের মত। সে ক্ষেত্রে পাথর প্যাক্রিয়াসের মাথার অংশে থাকবে,আকারে ২ থেকে ৩ মিলিমিটার হতে হবে, সংখ্যায় দুই তিনটা হতে হবে।
ক্যানসার ভয়াবহ রোগ। পরিত্রান পাওয়ার সম্ভবনা নেই। তবুও আশার কথা হলো ক্যানসার শুরুতে নির্নয় করা গেল কিনা। গতরছর আমেরিকাতে ৫৬ হাজার ক্যানসার সনাক্ত হয়েছে। সার্জারী করা সম্ভব হয়েছে মাত্র ১১ হাজার। আমাদের দেশে এই চিত্র আরো ভয়াবহ। তাই আসুন রোগকে শুরুতেই নির্ণয় করি, দ্রুত চিকিৎসা নেই, সুস্থ থাকি।
লেখক : সাংবাদিক/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ