স্বপ্নগুলো রঙ্গীন উঠুক
প্রভাষ আমিন
তার সাথে আমার পরিচয় ফেসবুকে। তখন তার নাম ছিল ‘ধূসর স্বপ্ন’। সাধারণত আমি এ ধরনের ছদ্মনামের অপরিচিত কাউকে বন্ধু তালিকায় নিই না। তাকে কেন নিয়েছিলাম এখন আর মনে নেই। কিন্তু পরে জেনেছি, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেধাবী ছেলের অকাল মৃত্যু তার স্বপগুলোকে ধূসর করে দিয়েছিল। তিনি চেয়েছিলেন তার ছেলে সাংবাদিক হোক, সে কারণেই কিনা জানি না বা তার ছেলের সাথে আমার চেহারার মিল ছিল কিনা তাও জানি না। কিন্তু আমার প্রতি তার এক ধরনের অন্ধ ভালোবাসা টের পাই, যার কোনো ব্যাখ্যা আমি জানি না। এখনও তার সাথে আমার দেখা হয়নি। কিন্তু ভালোবাসাটা অনুভব করতে আমার একটুও সমস্যা হয় না। সেই ভালোবোসাটা দারুণ একতরফা। এই একতরফা ভালোবাসার অত্যাচারে মুক্তি তাকে খুবই ‘অপছন্দ’ করে। কারণ হুটহাট তিনি গিফট পাঠান। কিন্তু তাকে কখনোই কিছু দেয়া যায় না। তার সূত্রে তার আরো দুই বোন ফররজানা তাহের এবং জেসমিন আক্তারও আমার ফেসবুক বন্ধু। আমি যা লিখি তার প্রতিটি অক্ষর তিনি পড়েন। শুধু ফেসবুকে পড়েই ক্ষান্ত হন না। সেই লেখা সঙ্কলন করে যখন বই প্রকাশ করি, সেটাও পড়েন। শুধু নিজে পড়েন না, তার বাসায় কেউ গেলেই আমার বই গিফট পান। নোয়াখালীতে তার বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত ‘মফিজউল্যা মেমোরিয়াল একাডেমি’র বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীদের আমার বই গিফট দেয়া হয়। মাঝে মধ্যে লেখালেখি ছেড়ে দিতে ইচ্ছা করে। কিন্তু যখন ভাবি অল্প হলেও তার মত কিছু পাঠক আমার লেখার জন্য অপেক্ষা করে, অনুপ্রেরণা পাই, নতুন উদ্যমে লিখতে বসি। সারাবছর লেখালেখি করলেও এই অপ্রয়োজনীয় লেখা নিয়ে বই প্রকাশ করে কাগজের অপচয় করতে মন টানে না। কিন্তু তার আন্তরিক তাগিদে উবে যায় সব অনীহা। জাকারবার্গের ছদ্মনাম বিরোধী অভিযানের সূত্রে তার নামটি আমাদের জানা গেছে। ফেসবুকে এখন তার নাম- মর্জিনা বেগম। ডাকনামটাও জানি- বেবি। নামের মত তার মনটাও শিশুর মত। তার ভালোবাসাটা যেমন তীব্র, অভিমানটাও। তিনি আমাদের কুমিল্লার বউ। তার বাসা কুমিল্লা শহরেই, আশির দশকে আমি যেখানে থাকতাম, সেই নিউ হোস্টেলের কাছেই। কিন্তু এখনও তার সাথে আমার দেখা হয়নি। আজ আমার এই অদেখা দুঃখীনি বোনটার জন্মদিন। ভালোবাসা ফিরিয়ে দেয়ার সাধ্য আমার মত অধমের নেই। আজ জন্মদিনে বলে রাখি, বেবি আপা আমরা আপনাকে অনেক ভালোবাসি, মুক্তিও অনেক ভালোবাসে। আমার মোবাইলে তার নাম্বার ‘ধূসর স্বপ্ন’ নামেই সেভ করা। কিন্তু এই মুহুর্তে বদলে দিলাম ‘রঙ্গীন স্বপ্ন’। জানি সন্তান হারানোর বেদনা একজন মা কখনো ভুলতে পারে না। তবুও চাই তার স্বপ্নগুলো আবার রঙ্গীন উঠুক, জন্মদিনে এই কামনা। জীবন একটাই, অমূল্য সেই জীবনকে আমাদের যাপন করতে হবে হাসি-আনন্দে। তার জন্মদিনেও আমি আশ্রয় খুজি রবীন্দ্রনাথেই ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে। তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে। তবু প্রাণ নিত্যধারা, হাসে সূর্য চন্দ্র তারা, বসন্ত নিকুঞ্জে আসে বিচিত্র রাগে।‘
পরিচিতি : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ/ফেসবুক থেকে