স্বাস্থ্যখাতে অবাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের জট
ড. তোফায়েল আহমেদ
নিত্যদিনের যানজট, বর্ষায় জলজট, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট, তার সাথে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন সমস্যা, অবাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের জট। দৈনিক সমকালের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে জানা গেল, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ৩৮ টি প্রকল্পের মধ্যে ১৬ টির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এ প্রতিবেদনে বিস্তারিত ভাবে স্বাস্থ ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পজটের অতিরিক্ত কারণ তুলে ধরা হয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে অনেক প্রকল্পের মেয়াদ গত বছর শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। এসব প্রকল্পের অগ্রগতি ৬ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ। কিছু প্রকল্পে নির্দিষ্ট কোন মেয়াদের উল্লেখ নেই। মেয়াদ অনির্ধারিত রেখে প্রকল্প পাশ করা হয়েছে। এতে করে এসব প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলো কিনা বুঝার উপায় নেই। ইতমধ্যে আইএমইডি এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, উভয়েই মতামত দিয়েছেন। তাতে আইএমইডির প্রতিবেদন গুলোতে প্রকল্পের বাস্তবায়নের ধীরগতির কথা উল্লেখ করা আছে। কিন্তু, এ ধীরগতির কারণ কি? এ কারণ গুলো সঠিক অনুসন্ধান করে এবং এ কারণ গুলো বিশ্লেষণ করে, প্রতিটি প্রকল্পের কারণ গুলো বিশ্লেষণ করে, প্রকল্পের পরিচালক বা সংগঠনের প্রধান, তাদেরকে কিন্তু জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে। কারণ, এতে করে দেশের মূল্যবান অর্থের অপচয় হয়। বিলম্বের কারণে দরপত্রের ব্যয় বৃদ্ধি পায়। অর্থ এবং সম্পদ দুটোই অপচয় হয়, কাজের গুণগত মান খারাপ হয়। যখন এই প্রকল্প গুলোকে ৬/৭ বছর ধরে উন্মুক্ত রাখায় তখন এই প্রকল্প গুলোর নির্মাণ সামগ্রীর মান নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য সময় মত শেষ করা প্রকল্পের গুণ ও মান রক্ষার জন্য একটা কার্যকর উপায়। মন্ত্রণালের প্রকল্প ঢিলে হওয়ার পেছনে বিশেষ কতগুলো কারণ থাকে। প্রথম কারণ যেটা পাওয়া গেল, স্থানীয় নেতৃত্বের কোন্দল, টেন্ডারে হস্তক্ষেপ, জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সমস্য সৃষ্টি করা। তারপর আছে দুর্নীতি। বই কেনার একটি প্রকল্পে দেখা গেল, ৫০০ টাকার একটি বই ৫ হাজার টাকায় কেনার দরপত্র হয়েছে, পরবর্তীতে সেটা বাতিল হয়ে গেছে। এ বিষয় গুলো এখন বাংলাদেশে ক্রমেই সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। যক্ষা বিষয়ক প্রকল্পের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মিথ্যা বিল বা ভাউচার বানিয়ে টাকা গুলো আত্মসাৎ করা হয়েছে। যখন তারা এটা সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে, তখন স¦াস্থ্য মন্ত্রণালয় চাঁদা উঠিয়ে সে টাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। এগুলোর অবসান হওয়া দরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আরেকটি বিশেষ কারণ আছে। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বরত যে সকল কর্মকর্তারা আছেন, তারা যতক্ষণ সময় অফিস কে দেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে যখনই স্বাস্থ্য প্রফেশনাল, স্বাস্থ্য বিষয়ক পেশাদার যারা ডাক্তার, তারা যখন দায়িত্বে থাকেন, তারা ব্যক্তিগত চেম্বার এবং ক্লিনিক, বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে সার্জারি করা, রোগী দেখা এগুলোকে তারা এত বেশি সময় দেন, তাদের যে সরকারি চাকরি যেটা, সেখানে কিন্তু এত বেশি সময় তারা দেন না। এমতাবস্থায়, কমিটমেন্ট দিয়ে এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা দরকার। আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তাদের যখন প্রকল্প পরিচালক করা হয়, তাদের এ সকল প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তারা কিন্তু অন্য বিভাগের প্রকল্প পরিচালকরা যেভাবে দায়িত্বটা পালন করেন, তারা সেভাবে করেন না। তাদের বাইরেও কিন্তু অন্য অনেকগুলো চাকরি আছে। এগুলো যদি চেক দেওয়া না যায়, তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যখাতে এই সমস্ত প্রকল্পের শুধু গতি স্থিতিশীলতা হওয়া নয়, সেবা থেকেও মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। হাসপাতাল গুলোকে পরিত্যক্ত করে দিয়ে, তারা অনেকেই ক্লিনিকে গিয়ে সময় ব্যয় করছে। অপর দিকে, ওষুধ সামগ্রি এত নিচে নেমে গেছে। এসব ওষুধে রোগ ভালো হচ্ছে না। অপারেশনের যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে কিছু প্রকল্পে দেখা যাচ্ছে, কনস্ট্রাকশনের কাজই যেখানে শেষ হয়নি, যে দলের দায়িত্ব যন্ত্রপাতি কেনা, সেখানে তারা অপারেশনের যন্ত্রপাতি কেনার জন্য পাগল হয়ে গেছে। কারণ, এখানে কন্ট্রাক্ট সাপ্লাইগুলো মূল। গুনগত এবং মানসম্পন্ন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, এগুলো মূল জিনিস নয়। এর থেকে আমরা বেড়িয়ে না আসলে, শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নয়, যে কোন মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প গুলোই আমাদের কে সঠিক সেবা দিতে পারবে না।
পরিচিতি : স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ/মতামত গ্রহণ : মাহবুবুল ইসলাম/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ