কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ৫০
ইসমাঈল হুসাইন ইমু, সুজন কৈরী ও সুশান্ত সাহা : ঢাকা থেকে নেপালগামি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ কাঠমান্ডুর ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে এ দূর্ঘটনা ঘটে।
উদ্ধারকাজে অংশ নেয়া নেপালের সেনাবাহিনীর উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে কমপক্ষে ৫০ জন নিহত হয়েছে। বিধ্বস্ত বিমানের ব্ল্যাক বক্স খুঁজে পেয়েছেন উদ্ধারকারীরা। পরীক্ষার জন্য সেটি পাঠানো হয়েছে। তবে ৪০ জন নিহতের খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। আর ইউএস-বাংলা কর্র্তৃপক্ষের দাবি এই দূর্ঘটনায় ৮ জন নিহত হওয়ার খবর তারা পেয়েছেন। গতকাল সোমবার ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস ২১১ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে রওনা হয় বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৫২ মিনিটে। নেপাল সময় বেলা ২টা ২০ মিনিটে কাঠমান্ডুতে নামার সময় পাইলট নিয়ন্ত্রণ হারালে উড়োজাজটি রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়।
ইউএস-বাংলার সিইও ইমরান আসিফ সাংবাদিকদের জানান, দূর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই দুই কর্মকর্তাকে নেপালে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু কাঠমুন্ডুতে বিমান ওঠানামা বন্ধ থাকায় তারা যেতে পারছেন না। তবে চালু হলে তাদের পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, উড়োজাহাজের পাইলট আবিদ সুলতানসহ চারজন ক্রু, বাংলাদেশের ৩২, নেপালের ৩৩, মালদ্বীপের ১, চীনের ১ ও ২ শিশু যাত্রী ছিল। এস২-এডিইউ মডেলের ৭৮ আসনের টুইন টার্বো প্রোপ উড়োজাহাজটি ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুতে পৌঁছানোর পর অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। এরপর পাশের একটি ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয়। ইউএস-বাংলার সিইও দাবি করেন, বিমান অবতরণের সময় নেপালের বিমান কর্তৃপক্ষের ভুল বার্তার কারণে এ দূর্ঘটনা ঘটনা ঘটেছে। ইউএস-বাংলার জিএম কামরুল ইসলাম জানান, গত তিন বছরে তারা ৩৬ হাজার ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন। কোন দূর্ঘটনা ঘটেনি। এটা একটা দূর্ঘটনা। ব্লাক বক্স উদ্ধার করা হয়েছে। সেটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হবে। দূর্ঘটনার কারণ জানতে নেপালের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তারা।
বারিধারার ইউএস-বাংলা অফিসের সামনে ওই বিমানের যাত্রী পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জেষ্ঠ সহকারি উম্মে সালমার বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ বলেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রধান নাজিয়া আফরিন চৌধুরী এবং বেগম উম্মে সালমাও ছিলেন এই ফ্লাইটে। তারা একটি কর্মশালায় অংশ নিতে কাঠমান্ডু যাচ্ছিলেন।
বিমানের আরেক যাত্রী কবির হোসেনের ছেলে শাওন জানান, তার বাবা দুই ব্যবসায়ী অংশীদারসহ নেপালে গেছেন। নেপালের একজন লোক তাদের টেলিফোনে হাসপাতাল থেকে জানিয়েছেন তার বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রফিকুজ্জামান তার স্ত্রী ও এক সন্তান ওই বিমানের যাত্রী ছিল বলে রফিকের বড়ভাই শামসুজ্জামান জানিয়েছেন।
কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র নারায়ন প্রসাদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা হতাহত যাত্রীদের উদ্ধারে কাজ করছে। আহতদের নিকটস্থ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণে ত্রিভুবন বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে সব ধরনের বিমান উঠানামা বন্ধ করে দেয়া হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক মার্কিন নাগরিক জানিয়েছেন, বিমানটি মাটির খুব কাছে দিয়ে উড়ে আসছিল। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন সেটি সম্ভবত পাহাড়ের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু পরক্ষণেই দেখেন সেটি মাটিতে আছড়ে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে তাতে আগুন ধরে যায়। এরপর আরও একটি বিস্ফোরণ ঘটে বলেও জানান তিনি। অবশ্য অগ্নি নির্বাপন দল ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।
অপরদিকে নেপালের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ডিজি সঞ্জিব গওতমের বরাত দিয়ে কাঠমান্ডু পোস্ট লিখেছে, ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ মডেলের ওই উড়োজাহাজ ত্রিভূবনে নামার কথা ছিল রানওয়ের দক্ষিণ দিক দিয়ে। কিন্তু সেটি নামার চেষ্টা করে উত্তর দিক দিয়ে। ধারণা করা হচ্ছে, পাইলট কোনো ধরনের কারিগরি জটিলতায় পড়েছিলেন।
এর আগে ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশের কোনো উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটেছিল। ওই বছর ৫ অগাস্ট বাংলাদেশ বিমানের একটি ফকার এফ-২৭ বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যে ঢাকা বিমানবন্দরের কাছে বিধ্বস্ত হলে ৪৯ জন নিহত হন। সম্পাদনা: ইকবাল খান