হুট করে এমসিকিউ বাতিলের বিপক্ষে শিক্ষক ও অভিভাবকরা
এ জেড ভূঁইয়া আনাস : চলতি শিক্ষাবর্ষের প্রায় আড়াই মাস শেষ। অথচ এসএসসি পরীক্ষায় বহুনির্বাচনি প্রশ্ন (এমসিকিউ) থাকবে কি না সেই সিদ্ধান্ত এখনো জানাতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ কারণে শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকরা উৎকণ্ঠায় আছেন। হুট করে এ পদ্ধতির পরিবর্তন আসলে সমস্যার সম্মুখীন হবে সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষার্থীদের অনেকে এই পদ্ধতির পরিবর্তনের বিপক্ষে হলেও শিক্ষক এবং অভিভাবকরা বলছেন, এই ব্যবস্থার পরিবর্তন আনা যুগোপযুগী সিদ্ধান্ত।
এ সম্পর্কে রাজধানীর গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক টিভিএনএ’কে বলেন, এমসিকিউ পদ্ধতি যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা যায় তাহলে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে এটি সহায়তা করবে। কিন্তু এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা সহজেই অনৈতিকতার আশ্রয় নিতে পারে। তাই পদ্ধতি বাতিল করা একটি যুগোপযুগী সিদ্ধান্ত। কিন্তু এর মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো কতটুক সম্ভব হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে হলে প্রশ্নব্যাংক পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে। এটা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কতটুক উপযোগী তা ভেবে দেখতে হবে। প্রশ্নপত্র পদ্ধতির যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। এ নিয়ে একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন তালুকদার বলেন, এই পদ্ধতি বাতিল করা দরকার। তবে হুট করে বাতিল না করে চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে।
এমসিকিউ পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মেধা যাছাই করা সম্ভব হয় না। এতে শিক্ষার্থীরা সহজেই ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারে। তাই এই ব্যবস্থা বাতিল করার পক্ষে সহমত জানিয়েছেন অভিভাবকরাও। এ সম্পর্কে গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরী হাই স্কুলের এক শিক্ষার্থী রকিবুলের মা সেলি আক্তার বলেন, আমি মনে করি এমসিকিউ প্রশ্ন বাদ দেওয়া উচিত। এই ব্যবস্থার কারণে দুর্বল শিক্ষার্থীরাও ভালো ফলাফল করছে। এতে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা যাচ্ছে না। তাই এমসিকিউ বাতিল করা হলে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন সহজ হবে। একই প্রতিষ্ঠানের আরেক শিক্ষার্থী মো. সেলিমের মা নাজনীন আক্তার বলেন, এমসিকিউ যদি বাদ দেওয়া হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ সৃজনশীল প্রশ্ন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা পুরো বইয়ের উপরই ধারণা রাখে। তবে হুট করে বছরের মধ্যখানে এটা বাতিল না করাই ভালো হবে।
শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে একমত শিক্ষার্থীরাও। এ বছরই এমসিকিউ বাতিল না করে পরবর্তীতে এটা বাতিলের কথা বলছেন তারা। তবে অনেক শিক্ষার্থী এমসিকিউ বাতিলের বিপক্ষেও মত দিয়েছেন। তারা বলছেন, এ পদ্ধতি বাতিল করে নয়, প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অন্য উপায় বের করতে হবে। গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরী স্কুলের শিক্ষার্থী ইসতিয়াক শারফাত হাদি বলেন, আমরা এখন ৭টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে কষ্ট হয়ে যায়। এর সাথে যদি আরো প্রশ্ন যোগ হয় তাহলে আমাদের ফলাফলের উপর বিরাট প্রভাব পড়বে। তাই এই পদ্ধতি রেখে কিভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো যায় তার ব্যবস্থা করা উচিত।