তারল্য সংকটের কারণেই শেয়ারবাজারে দরপতন : ডিবিএ
মাসুদ মিয়া : দেশের শেয়ারবাজার তারল্য সংকটের কারণে গতিশীল হতে পারছেনা এবং অস্থিরতাও কাটছে না। সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে দায়ী করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার এসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি মোস্তাক আহমেদ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান কাযালয়ে পুঁজিবাজের সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলে। তিনি বলেন, দেশে মূলত তারল্য সংকটের কারণেই শেয়ারবাজারে ধ্বসের মত ঘটনা ঘটছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক তা বসে বসে দেখছে। এ তারল্য সংকট পুরোপুরি দায়ীই হলো বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের এ অসহযোগিতার কারণে দেশের শেয়ারবাজারে এমন বেহাল দশা। মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, মুদ্রাবাজারে তারল্য সংকট থাকলেও শেয়ারবাজারে এই সমস্যাটি তেমন নেই। প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে যতেষ্ঠ তারল্য থাকার পরও তারা বাংলাদেশ ব্যাংককের ভয়েই বিনিয়োগ করছেন না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু বিষয়ে নমনীয় হলেই বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। সাদেক বলেন, আজকের বৈঠকে শীর্ষ ৩০ ব্রোকারেজ প্রতিনিধিদের বক্তব্য শুনেছি। তাদের বক্তব্যের ভিত্তিতে বলা যায়, পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশ ব্যাংককের কারণেই হচ্ছে। কারণ হলো প্রাতিষ্ঠানিক বড় বিনিয়োগকারীদের থেকে যে সাপোর্ট আমরা পেতাম, সেটা এবার পর্যাপ্ত নয়। তিনি বলেন, বাজারে সাপোর্ট দিতে আমরা আইসিবিকে বরাবরই শক্তিশালী অবস্থান নিতে দেখেছি। তবে খোদ আইসিবিকেই যদি দুর্বল করে রাখা হয়, তাতে সাপোর্ট লেবেলও দুর্বল হয়ে যায়।এডিআরের বিষয়ে ডিবিএ সভাপতি বলেন, এক সার্কুলারের মাধ্যমে ৬ মাসের মধ্যে সমন্বয় করার কথা বলা হলেও পরে এটির মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ানো হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ দেওয়ান পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে এ বিষয়টি বাজারের কোনো উপকারে আসছে না। মোস্তাক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সীমাবন্ধতার কারণে দেশের বেসরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ারবাজারে যথাযথ বিনিয়োগ করতে পারছেনা। ব্যাংক ঋণ ও আমানতের সুদ হার অনুপাতের রেশিও বাড়ালে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংক শেয়ারবাজারে যে পরিশাণ বিনিয়োগের রুল জারি করেছে তাতে করে ইচ্ছে থাকলেও কোন প্রতিষ্ঠান বেশি বিনিয়োগ করতে পারেনা।
এ ক্ষেত্রটা বাংলাদেশ ব্যাংকে দেখার আহবান জানান তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংক সবকিছু বুঝেও জেগে ঘুমাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সরকারকারী ব্যাংকগুলোকেও দায়ী করে মোস্তাক আহমেদ বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলোতে সরকারের তহবিল ফান্ডের টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে সরকার এবং শেয়ারবাজার দুইটাই লাভবান হবে। সরকার বাঁচলে ব্যাংক বাঁচবে আর ব্যাংক বাঁচলে দেশের শেয়ারবাজার বাঁচবে বলেও জানান তিনি। প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ফান্ড থাকার পরও এক্সপোজারের কারণে তারা বিনিয়োগ করতে পারছে না। এডিআরের বিষয়ে ডিবিএ সভাপতি বলেন, এক সার্কুলারের মাধ্যমে ৬ মাসের মধ্যে সমন্বয় করার কথা বলা হলেও পরে এটির মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ানো হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ দেওয়ান পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে এ বিষয়টি বাজারের কোনো উপকারে আসছে না। এ সময় বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে সেসব সমস্যা তৈরি হচ্ছে; সেগুলো সমাধান করতে হবে। বিশেষ করে এক্সপোজারের সমস্যা। তিনি বলেন, আমরা আগে শীর্ষ ব্রোকারেজ প্রতিনিধিদের কাছ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাব নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংককে দিয়েছি। এর মধ্যে কস্ট প্রাইসে এক্সপোজার বিবেচনা, একই বিনিয়োগ দৈত গণনা, বন্ডে বিনিয়োগকে এক্সপোজারের বাইরে দেখা। এসব বিষয়ে আমরা এখনো তেমন সাড়া পায়নি। আশা করছি বিষয়গুলো নিয়ে ইতিবাচক সাড়া পেলে শেয়ারবাজারও ইতিবাচক হবে।