যোগ্য সাইকোলজিস্টের প্রয়োজন আমাদের ক্রিকেট টিমে
এই নিয়ে গত কয়েক বছর বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম পাঁচবার ফাইনালে পৌঁছেও কাক্সিক্ষত ট্রফিতে হাত ছোঁয়াতে পারল না। দলীয় পারফরমেন্স প্রতিটি পরাজয়ে মুখ্য বিষয় ছিল না। মূলত মানসিক চাপে ভেঙে পড়ার কারণেই শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে শেষ বলে দুর্ভাগ্যজনকভাবে হেরে যাওয়ার মাধ্যমে আবার প্রমাণিত হলো বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের মানসিক শক্তির ঘাটতি রয়েছে। তা পুষিয়ে নিতে পারলেই ক্রিকেট বিশ্বে নিজেদের শক্তিমত্তার প্রতিদান তারা অর্জন করতে পারবে। খেলার মাঠে ক্রিকেটীয় ভুল-ত্রুটি নিয়ে অনেক আলাপ হতে পারে, কিন্তু তার চেয়েও মুখ্য বিষয় হচ্ছে মনস্তাত্ত্বি¡ক লড়াইয়ে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করা ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মানসিকতায় অভ্যস্ত হওয়া। স্কিল-টেকনিকের বাইরে এর জন্য প্রয়োজন অন্যকিছু। বিগত ম্যাচগুলোতে পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণে যেটা দরকার তা হলো, আমাদের ক্রিকেট দলের এই মুহূর্তে প্রয়োজন একজন অভিজ্ঞ সাইকোলজিস্ট ও মেডিটেশন স্পেশালিস্ট।
আমাদের জানা মতে, ভারতীয় টিম অনেক আগেই এই বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। তার ফলাফলও পাচ্ছে। অল্প কিছু উদহারণ দেওয়া যায়। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে ম্যান্ডি গর্ডন ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাইকোলজিস্ট হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। পাশাপাশি ভারতীয় দলের খেলোয়াড়রা তাদের মানসিক শক্তির উন্নয়নের জন্য পরামর্শ নিয়ে থাকেন সাইকোলজিস্ট বিষমরাজ বাম ও ক্ষেত্র বিশেষে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের প্রতিষ্ঠান ‘সমীক্ষা’ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করে থাকেন। টিম অস্ট্রেলিয়া ২০১৩ সালে অ্যাশেজ সিরিজের আগে ডক্টর মিশেল লয়েড নামের খ্যাতিমান মনোবিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়েছিল। পাকিস্তান ক্রিকেট টিমে প্রাক্তন ক্রিকেটার মাঈন-উল-আতিক কাজ করেন দলের মনোবিশেষজ্ঞ হিসেবে। এমনকি ইংল্যান্ড কাউন্টি ক্রিকেট টিমেও সাইকোলজিস্টরা কাজ করে থাকেন। নটিংহ্যামশায়ারের জেমি বার্কার একজন স্বনামধন্য মনোবিশেষজ্ঞ। স্টুয়ার্ট কোটারিলের সাথে যৌথভাবে লেখা বার্কারের ‘দ্য সাইকোলজি অব ক্রিকেট’ বইটি প্রতিটি খেলোয়াড়-কোচের জন্য অবশ্যপাঠ্য হিসেবে বিবেচ্য।
এই প্রসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার স্টিভ ওয়াহর একটি কথা বিশেষ ভাবে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, মাঠে দুই দলের মেধা সমান হলে যার মানসিক শক্তি বেশি থাকে, তারাই শেষ মুহূর্তে জিতে যায়। আমাদের সাথে ফাইনালে জেতা প্রতিটি দলের ক্ষেত্রেই কথাটা প্রযোজ্য। এই মুহূর্তে টাইগারদের আবেগ সংবরণের মানসিকতা পরিবর্তন ও কঠিন মুহূর্তে ক্রিকেট মস্তিষ্ক বরফ শীতল রাখতে যোগ্য এক বা একাধিক সাইকোলজিস্টের প্রয়োজন। এখনই সময় স্রেফ চাপে ভেঙে পড়ার ঐতিহ্য থেকে বেরিয়ে আসার। তাহলে হয়তো শেষ বল সেøায়ার দেয়া বা বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ডারদের পাঠিয়ে প্রতিপক্ষকে পাল্টা চাপে ফেলার ‘ক্রিকেটীয় জ্ঞান’ আমজনতার মাথাতে এলেও মাঠে প্লেয়াররা কেন তা নিতে পারেননি এই জাতীয় আফসোসে আর পুড়তে হবে না। এটা তো সত্য, যারা মাঠে থাকেন তারাই বোঝেন মানসিক চাপ কত কঠিন বিষয়। আগামী বিশ্বকাপের আগে মানসিক চাপের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে ও ফাইনালে হোঁচট খাবার ঘেরটোপ থেকে বেরিয়ে আসতে আশা করি আমাদের ক্রিকেট বোর্ড যথাযথ মনোযোগী হবেন।
লেখক : চিকিৎসক ও লেখক