জাতিসংঘসহ এনজিও কার্যক্রম বন্ধ করবে মিয়ানমার
শোভন দত্ত: জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (আইএনজিও)-গুলোর কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারির সুযোগ রেখে আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে মিয়ানমার। এর মধ্য দিয়ে মিয়ানমারে জাতিসংঘসহ অন্য আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রমের ওপর কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত আইনটির খসড়ার কপি হাতে পাওয়ার দাবি করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট খবরটি জানিয়েছে।
গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ।মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন ইতোমধ্যে ‘জাতিগত নির্মূলের পাঠ্যপুস্তকীয় দৃষ্টান্ত আখ্যা দিয়েছে। মহাসচিব প্রশ্ন তুলেছেন দুই তৃতীয়াংশ মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হলে তাকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ ছাড়া আর কী নামে ডাকা হবে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণকে রোহিঙ্গা তাড়ানোর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগও এনেছে জাতিসংঘ। তবে কোনওভাবেই আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সেখানে প্রবেশাধিকার দিচ্ছে না তারা। এ বছরের জানুয়ারিতে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর অভিযোগ করে, মিয়ানমারে এখনও ত্রাণ সংস্থা, মিডিয়া ও অন্য স্বাধীনধারার পর্যবেক্ষকদের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করে রাখা আছে।
এবার মিয়ানমারে প্রস্তাবিত আইনের খসড়া হাতে পাওয়ার দাবি করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, আইন প্রণয়ন করে আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কার্যক্রমের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করতে চাইছে মিয়ানমার। আইনের খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের কর্মকর্তারা এসব সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে। এসব উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রম বন্ধে সরকারের এখতিয়ার সীমিত করারও কোনও সুযোগ নেই বললেই চলে। সেকারণে কিছু কিছু বেসরকারি সংস্থা আশঙ্কা করছে, মিয়ানমারে তাদের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে আইনটি ব্যবহার করা হতে পারে।
মিয়ানমারে কার্যক্রম পরিচালনারত কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার জোট (আইএনজিও ফোরাম) ফেব্রুয়ারিতে পর্যালোচনা দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ‘আইনটি প্রণয়ণের পেছনে যে উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে তার মধ্য দিয়ে সরকার তাদের বিরুদ্ধে যায় এমন কর্মকা-গুলো দমন করতে এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সুরক্ষার প্রচেষ্টাকে খর্ব করতে পারবে। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা এবং কূটনীতিকরা পার্লামেন্টারি কমিটির সদস্যদের সঙ্গে লবিং করার চেষ্টা করছে যেন তারা আইনের খসড়াটি পর্যালোচনা করে সেখানে শব্দ পরিবর্তন কিংবা প্রত্যাহার করে। সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট