‘উন্নয়নশীল মানে এই নয় দেশের সব মানুষ উন্নত হয়ে গেছে’
আশিক রহমান : রাজনীতিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার হায়দার আকবর খান রনো বলেছেন, স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ এখন আমরা। এটা একটা গাণিতিক হিসাব। গাণিতিক এই হিসাব দ্বারা কোনো কিছুই প্রমাণিত হয় না। কারণ এখনো দেশের অনেক মানুষ দরিদ্র, এখনো অনেক মানুষ চিকিৎসা সুবিধা পায় না, এখনো দেশে বৈষম্য রয়েছে সাংঘাতিকভাবে। কেউ কেউ ফাইভ স্টার হোটেল টাইপের চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন আর কেউ কেউ কোনো চিকিৎসাই পাচ্ছে না। যে বৈষম্য চলছে সমাজে তা নিয়ে তো গর্ব করার কিছু নেই। হ্যাঁ, ধনী হয়েছে। তবে মাত্র কিছু লোক। কিন্তু সাধারণ জনগণ ধনী হয়েছে এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই।
আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে অন্তর্ভুক্ত হওয়া তো একটা গাণিতিক হিসাব। জাতীয় আয় যদি একটা সার্টেন লেভেল ক্রস করে তখন সেটাকে উন্নয়নশীল দেশ বলা হয়। তার মানে এই নয় যে, দেশের সব মানুষ উন্নত হয়ে গেছে। এটা একটা গড় হিসাব। গড় আয়ে কিছু মানুষের যদি অনেক টাকা হয় আর বেশিরভাগ মানুষ গরিব থাকে তাহলেও স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে এই বিশ্লেষক বলেন, আমাদের কাম্য বৈষম্যহীন একটি সমাজ ব্যবস্থা কায়েম। সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মাণে আমাদের করণীয় কী সংবিধানেই স্পষ্ট করে বলা রয়েছে। আমি মনে করি, আমাদের সমাজতন্ত্র করা উচিত। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো তো সমাজতন্ত্র বিশ্বাস করে না। যদিও আওয়ামী লীগ সমাজতন্ত্র লিখে রেখে দিয়েছে, কিন্তু একটা …। আর বিএনপি তো এ বিষয়ে কিছু বলেই না।
তিনি বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ বা রাষ্ট্রগঠনে সমাজতন্ত্রই হচ্ছে একমাত্র সমাধান। সেই পথে তো কেউ আসছেই না। বৈষম্যহীন একটি সমাজের জন্যই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি বৈষম্যের পথেই এগোচ্ছে, যে অর্থনীতি তারা চালু করেছে, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করছে।
তিনি আরও বলেন, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কিন্তু সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার কোনো মানসিকতাই তো তাদের নেই। লুটপাটই হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য। লুটপাট, অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করুক, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করুক তাহলে বৈষম্য দূর হবে। কিন্তু তারা তো একবারও বলে না এ বিষয়ে কিছু, তাহলে তাদের আমি কি পরামর্শ দিব? সমাজতন্ত্র ছাড়া বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা হতে পারে না। পুঁজিবাদী সমাজে কিছু মানুষের উন্নয়ন হয়, কিন্তু বেশির ভাগ মানুষেরই কোনো উন্নয়ন হয় না। যে উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে তা হচ্ছে ধোঁকাবাজি।