বেদনা বিধুর পরিবেশে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর
মাসুদ আলম ও সুশান্ত সাহা : কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দূর্ঘটনায় নিহত ২৩ জনের লাশ বেদনা বিধুর পরিবেশে সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে হস্তান্তর করা হয় স্বজনদের কাছে। এসময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন স্বজনেরা। আর্মি স্টেডিয়ামে ২৩ পুলিশ কর্মকর্তা স্বজনদের কাছে নিহত ২৩ জনের লাশ হস্তান্তরের সময় প্রত্যেকের আলাদা ফাইলে তথ্য সংগ্রহ ও ফরম পূরণ করে রাখেন। বিকাল সোয়া চারটার দিকে শাহজালাল বিমানবন্দরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে কাঠমান্ডু থেতে বিশেষ বিমানে আনা ওই ২৩ জনের লাশ হস্তান্তর করেন বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার। বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের যে সব স্বজন কাঠমান্ডুতে গিয়েছিলেন, তাদেরও ইউএস বাংলার একটি বিশেষ ফ্লাইটে গতকাল দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। বিমানবন্দর থেকে আগেই তাদের নিয়ে যাওয়া হয় আর্মি স্টেডিয়ামে।
সেখান থেকে এ্যাম্বুলেন্সে ২৩ জনের লাশ আর্মি স্টেডিয়ামে নেওয়ার পর সেখানে জানাজা হয়। জানাজা পড়ান সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. মাহমুদুল হক। জানাজায় নিহত ব্যক্তিদের স্বজন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন।
জানাজা শেষে নিহতদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে তার সামরিক সচিব, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে পৃথকভাবে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধান উপস্থিত ছিলেন।
এই ২৩ জনের মধ্যে ইউএস-বাংলার পাইলট আবিদ সুলতান, কো-পাইলট পৃথুলা রশীদ এবং কেবিন ক্রু খাজা হোসেন মো. শফি ও শারমিন আক্তার নাবিলা রয়েছেন। আর যাত্রীরা হলেন, ফয়সাল আহমেদ, বিলকিস আরা, বেগম হুরুন নাহার বিলকিস বানু, আখতারা বেগম, নাজিয়া আফরিন চৌধুরী, রকিবুল হাসান, হাসান ইমাম, আঁখি মনি, মিনহাজ বিন নাসির, ফারুক হোসেন প্রিয়ক, তার মেয়ে প্রিয়ন্ময়ী তামারা, মতিউর রহমান, এস এম মাহমুদুর রহমান, তাহিরা তানভিন শশী রেজা, বেগম উম্মে সালমা, মো. নুরুজ্জামান, রফিক জামান, তার স্ত্রী সানজিদা হক বিপাশা, তাদের ছেলে অনিরুদ্ধ জামান।
উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ওই উড়োজাহাজ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় ৪৯ আরোহীর মৃত্যু হয়, যাদের মধ্যে চার পাইলট-ক্রুসহ ২৬ জন বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে ২৩ জনকে শনাক্ত করে গতকাল দেশে নিয়ে আসা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ এরআগে জানিয়েছিলেন, চিহ্ন দেখে বা অন্যভাবে ওই তিনজনকে শনাক্ত করা না গেলে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
আহত ১০ জনের মধ্যে গত রোববার পর্যন্ত ৬ জন দেশে ফিরেছেন। তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন। তারা হলেন- শাহরিন আহমেদ মুমু, মেহেদী হাসান, সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা, আলমুন নাহার অ্যানি, রাশেদ রুবায়েত ও শাহিন ব্যাপারী। বাকি চার জন সিঙ্গাপুর, নেপাল ও ভারতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর আগে গতকাল সকালে কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাসে নিহতদের প্রথম জানাজা হয়।