কক্সবাজারে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছে বাংলাদেশিরা
তরিকুল ইসলাম : রাখাইন সংকটের জন্য হঠ্যাৎ করে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজার এলাকাতে চলে আসায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার উপর অস্বাভাবিক রকমের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। উখিয়া ও টেকনাফে প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করে। আর যে ৭টি ইউনিয়নের আওতায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও তাদের আশ্রয়স্থল রয়েছে সেখানে ৩ লাখ ৩৬ হাজার বাংলাদেশি বসবাস করে। এ স্থানটিতে ইতিমধ্যে সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে বাংলাদেশিরা। রোহিঙ্গা সংকট উত্তরণে জাতিসংঘের তৈরি করা জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের সূত্র ধরে এমনটাই জানিয়েছেন সংস্থাটির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।
জাতিসংঘের সূত্র জানায়, কক্সবাজার জেলায় বাংলাদেশ সরকার থেকে যে সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা হয়েছিলো তা এখন ধীর গতির ঝুঁকির দিকে এগুচ্ছে। স্থানীয় বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গারা একই বাজার থেকে ভোগ্যপণ্য সংগ্রহ করায় স্থানীয়দের ভোগ্যপণ্য সংগ্রহে বেগ পেতে হচ্ছে। এতে করে বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে পরিবার প্রতি খাদ্য সংগ্রহে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বসবাসরত স্থানীয়দের মধ্যে ১৭ শতাংশ দরিদ্র থাকায় পরিবারগুলোর ক্রয় ক্ষমতা ও আর্থিক সম্ভাবনা কমেছে। কক্সবাজারে খাদ্য উৎপাদনে ৩৪ হাজার টন উদ্বৃত্ত থাকলেও চলতি বছরে রোহিঙ্গা সংকটের কারণে তা ঘাটতিতে পড়তে যাচ্ছে। চলতি বছরে প্রায় দেড় লাখ টন খাদ্য ঘাটতি হবে বলে মনে করছে জাতিসংঘ।
সংস্থাটি জানিয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কারণে সেখানে পণ্য পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায়ীদেরও মুনফা কমতে শুরু করেছে। বাজারে খাদ্য পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও খাদ্য প্রস্তুতের জন্য জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ স্থানীয় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। বাজারে ক্রেতা বাড়ায় পণ্যের দামও উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির এবারের সংকট মোকাবিলা পরিকল্পনায় রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে। চলতি বছরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও রোহিঙ্গাসহ মোট ১৩ লাখ জনগোষ্ঠীর জন্য ৯৪ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থায়নের জন্য চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে।
ঢাকায় কর্মরত জাতিসংঘের সূত্র মতে, স্থানীয়রা বেশিরভাগই অদক্ষ শ্রমিক হওয়ায় কৃষিকাজ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসার বাইরে যেতে পারছে না। টেকনাফ ও উখিয়ার বেশিরভাগ মানুষ মৌসুমে মাছ ধরাসহ কৃষি কাজ, সুপারি ও পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। রোহিঙ্গা প্রবেশের পর থেকে সেখানকার দৈনিক মজুরি কমে এসেছে। রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বের হয়ে নির্মাণকাজ, কৃষি, মাছ ধরা, রেস্তোরাঁসহ দিন মজুর হিসেবে শ্রম দিচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়মিত হারের থেকে কমে প্রায় অর্ধেক দামে রোহিঙ্গাদের মজুরি দেয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে এ প্রতিবন্ধকতার কারণে স্থানীয়দের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রতি ক্ষোভ তৈরি হতে শুরু করেছে। এছাড়া আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ঝড় এবং ভূমি ধসের মতো ঘটনা থেকে কক্সবাজারে দরিদ্রতা বেড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। সম্পাদনা : তরিকুল ইসলাম সুমন