ভীতিকর একটা দৈন্য আমাদের রাজনীতিতে
বিস্তার করছে : ব্যারিস্টার আমীরআশিক রহমান : আমাদের সমাজটা এমন হয়ে গেছে, আমরা এমন একটা রাজনীতির ভেতরে পড়ে গেছি যে যেখানে শুধু ক্ষমতার বিষয়টাই প্রধান্য পাচ্ছে। কিন্তু মানবিক মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এ জায়গাটাতে বড় ঘাটতি রয়েছে আমাদের। এই ঘাটতি যদি অতি শিগগিরই পূরণে উদ্যোগ গ্রহণ করা না হয় তাহলে যত উন্নয়ন হয়েছে আমাদের তাতে ধস নামবে…, যা কারও কাক্সিক্ষত নয়, হতে পারে না। এমন মন্তব্য করেছেন অন্যতম সংবিধান প্রণেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম।
আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, শহীদের রক্তে অর্জিত বাংলাদেশেÑ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম, বিভিন্ন উপজাতি, বাঙালি-নন বাঙালি, এমনকি অন্য দেশ থেকেও যারা এখানে আসছে তাদের ঠাই দিচ্ছি আমরা। এটা আমাদের মানবতাবোধ, মানবিকতার পরিচয়। মানবতাবোধের এই জায়গটা অক্ষুণœ রাখতে হলে রাজনীতিটাকে মানবিক রাজনীতিতে নিয়ে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অপরাধ-অপকর্মগুলো যারা করছে, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা নিজেরা মারামারি করছে, খুন-খারাবি করছে, ভীতিকর একটা সামাজিক দৈন্য আমাদের রাজনীতিতে বিস্তার করছে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, সব কিছুকে পণ্যে রূপান্তরিত করা যায় না। আর রাজনীতি পণ্যে রুপান্তরিত করা হোক সেটা কখনই আওয়ামী লীগের রাজনীতি হতে পারে না। কিন্তু সেই জায়গা থেকে আমরা সরে এসেছি।
ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, তার প্রদর্শিত পথ, তিনি যে দল সৃষ্টি করেছিলেন, দলে যেভাবে ত্যাগী মানুষদের সৃষ্টি করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে দেশের প্রতিটি জেলায় যেসব নেতা ছিলেন, তাদের সঙ্গে যে কর্মীরা কাজ করেছিলেন, যুদ্ধ করেছিলেন তাদের যে ত্যাগ, সততা-স্বচ্ছতা সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি থাকা, এলাকার মানুষের শ্রদ্ধা অর্জনের জন্য যা কিছু প্রয়োজন সবকিছুই তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিল। সে কারণেই আমরা মুক্তিযুদ্ধটা করতে পেরেছিলাম। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করা গিয়েছিল তখন। সেই জায়গাটিতে ফিরে যেতে হবে আমাদের। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে আমাদের চলতে হবে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও জীবনাচারণ সবকিছু একটি কক্ষে নিয়ে আসতে হবে, যে কক্ষে দৃশ্যমান হবে মানবিকতার বিকাশ।
সরকার বা আওয়ামী লীগের সমালোচনা করলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এই সংবিধান প্রণেতা। ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা এখন আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশকেও। তিনি যদি মনে করেন বঙ্গবন্ধু পরিচালিত ঐতিহ্যের আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনতে হবে, তা তিনি করতে পারবেন। বাংলাদেশ এখন যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, যে বাংলাদেশ শেখ হাসিনা গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন তা বাস্তবায়ন করতে পারবেন যদি ইনফোর্স করেন। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব আজ সবার কাছে প্রশংসিত হচ্ছে। এর পুর্ণাঙ্গপ্রাপ্তি বাংলাদেশের জন্য পেতে হলে প্রধানমন্ত্রীকে মনোযোগ দিতে হবে মানবতার যে ধর্ম, রাজনীতিতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যে অসাম্প্রদায়িক সমাজ এখানে তা সংরক্ষণে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন দরকার। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা সবার জন্য নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু দুর্নীতিকে যদি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রশ্রয় দেয় সরকার তাহলে আরও অধঃপতন হবে আমাদের। তবে দুর্নীতির ক্ষেত্রে সরকারের সহনশীলতা অনেক বেশি বলেই মনে হয় আমার। এ ধরনের অবস্থান থেকে বের হয়ে আসতে হবে আমাদের।
আমরা দেখতে চাই, কোনো দুর্নীতিবাজ বা কালো টাকার মালিক আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছে না। এমনটি দৃশ্যমান হলে আমরা বুঝব যে অন্তত আওয়ামী লীগ দুর্নীতি থেকে দূরে সরে এসেছে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আওয়ামী লীগকে ফেরাতে সমর্থ হয়েছে।