‘বাসায় আসতে ভোর হবে’ স্ত্রীর সাথে জালালের শেষ কথা
সুশান্ত সাহা : আমার আসতে ভোর হয়ে যাবে। তুমি দারোয়ানের কাছে চাবি রেখে দিও। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (পশ্চিম) পরিদর্শক নিহত জালাল উদ্দিন তার স্ত্রী বিনা পারভীনের সাথে এই শেষ কথা কথা হয়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে জানাজা স্থলে কান্নায় আবেগতাড়িত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন নিহত জালাল উদ্দিনের স্ত্রী বিনা পারভীন।
সোমবার গভীর রাতে রাজধানীর মিরপুর মধ্যপীরের বাগ এলাকার একটি বাসায় সন্ত্রাসী রয়েছে এমন সংবাদের ভিক্ততে অভিযানে গেলে সন্ত্রাসীরা টের পেয়ে পুলিশকে লক্ষ করে গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। এসময় জালাল উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হন । তাকে উদ্ধার করে স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে সন্ত্রাসীদের পরিবারের তিন সদস্যকে আটক করে পুলিশ।
বিনা পারভীন বলেন, সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফোন দিয়ে বিনা পারভীনের জানতে চায় ‘তুমি কখন আসবে বাসায়? । জবাবে জামাল জানায় ‘আমার আসতে ভোর হয়ে যাবে। তুমি দারোয়ানের কাছে চাবি রেখে দিও।’ ‘জালাল আর ফিরে আসেননি। ফোনও করেননি। রাত ১২টার দিকে একবার ফোন করে দেখি তার ফোন বন্ধ। এর আগেও ফোন বন্ধ থাকত। পরে আবার কল ব্যাক করত। আজও ফোন খোলেওনি, কলও ব্যাক করেনি। এরপর রাত দেড়টার দিকে একটা অজানা নম্বর থেকে ফোন করে স্কয়ার হাসপাতালে যেতে বলা হয়। এরপর ফুফাত বোনকে ডেকে তার গাড়িতে স্কয়ার হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি জালাল নেই।
রাজারবাগে মায়ের সঙ্গে আসে দুই কন্যা সন্তান জান্নাতুল ফেরদৌস তৃপ্তি ও ফারহানা আফরোজ তূর্যা। তৃপ্তি দশম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগে ও তূর্যা অস্টম শ্রেণীতে পড়ে। এ দুজনই ভিকারুন নিসা নূন স্কুলে পড়ে।
জালাল উদ্দিনের স্ত্রীর ফুফাত বোন রিমপা খাতুন বলেন, সোমবার সকাল সাড়ে ৭টায় জালাল উদ্দিন বের হয়ে যান। এরপর সারাদিন আর বাসায় ফেরেননি। প্রতিদিন বাবার সাথেই দুই মেয়েও কোচিংয়ে যান। গত রোববার সকালে মেয়েদের বলেছিলেন, আমি আর তোমাদের কোচিংয়ে নিয়ে যেতে পারব না। তোমরা ঘুম থেকে উঠতে দেরি করো। এখন থেকে একা একাই কোচিংয়ে যেতে হবে। কারণ আমার অফিসে ৯টার আগেই ঢুকতে হবে। আজ থেকে সত্যিই সত্যিই মেয়েদের আর কোচিংয়ে নিয়ে যাবেন না জালাল উদ্দিন। রিমপা খাতুন বলেন, ‘সকালে বেরিয়ে যেতেন। আর রাত ১২টার দিকে বাসায় ফিরতেন। কাজকেই উনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন।