‘আমাদের উন্নয়ন-অগ্রগতি-অর্জনের প্রথম ভাগিদার দেশের কৃষকেরা’
আশিক রহমান : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেছেন, বাংলাদেশ যে এখন একটি উন্নয়নশীল দেশ, এই উন্নয়ন-অগ্রগতির, অর্জন বা সাফল্যের প্রথম ভাগিদার আমাদের দেশের কৃষকেরা। যার কঠোর শ্রমে কৃষিতে একটা নিরব সাকসেসফুল স্টোরি তৈরি করেছেন।
আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ১৯৭২-৭৩ সালে আমাদের যে ধানী জমি ছিল, তাতে যে উৎপাদন হতো, জনসংখ্যার হিসেবে খাদ্য ঘাটতির একটা দেশ ছিলাম তখন আমরা। ৪৬ বছরের বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ম্ভর। যদিও আমাদের চাষ্যযোগ্য জমির পরিমাণ কমে গেছে, জনসংখ্যা দ্বিগুন হয়েছে। আমাদের পুষ্টি, সামাজিক বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে যাওয়া, গড়– আয়ু বৃদ্ধি, অন্যান্য সূচকে অগ্রগতি হওয়ায় এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। তিনি আরও বলেন, চার-পাঁচ বছর নয়, ধারাবাহিকভাবে হয়ে এসেছে এই উন্নয়ন। বিগত ৪৬ বছরে আমাদের অর্থনীতিতে যত বিদেশি বিনিয়োগ, সাহায্য-সহযোগিতা এসেছে, রপ্তানি সূত্রে যত অর্জন, রেমিটেন্স এসেছে তা যদি অর্থনীতিতে সঠিকভাবে বিনিয়োগ হয়ে থাকে বা হলে যে ফলাফল আসার কথা সেই ফলটা আমরা পেয়েছি বা পাচ্ছি। উন্নয়নের দিকে আমরা যাচ্ছি। এই উন্নয়ন-অগ্রগতি হঠাৎ করে, রাতারাতি, এমনি এমনি হয়নি, দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়ায় সবার, সব ধরনের অবদান স্বীকার করতেই হয়।
উন্নয়নশীল দেশের তালিকাভুক্তিতে কী লাভ হলো বাংলাদেশের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ সবগুলো সূচক ভালো থাকায় ভালো অর্থে একটা শক্তি পাওয়া যায়। বিদেশে গ্লোবাল অরগানাইজেশন, গ্লোবাল ট্রেডে একটা সম্মানজক, অগ্রগতিমূলক অবস্থানের স্বীকৃতি পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, আমরা একটা গ্রহিতা দেশ, এখনো বিদেশি ঋণের উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। উন্নয়নশীল দেশের তালিকাভুক্ত হওয়ার ফলে ভবিষ্যতে সহজশর্তে ঋণ বা কনসিডারেশন পাওয়ার ক্ষেত্রে বেঘাত সৃষ্টি হবে। উন্নয়নশীল দেশে অন্তর্ভুক্তির অনেক কস্ট আছে। এই কস্ট হচ্ছে সহজ শর্তে ঋণ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কনসিডারেশনের সুযোগ থেকে পিছিয়ে পড়তে হবে। কেউ তখন সহজ শর্তে ঋণ দিবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমাদের এই উন্নয়ন-অগ্রগতি আরও আগেই হতে পারত। হয়নি। কারণ এ ধরনের উন্নয়নে অনেকগুলো ফ্যাক্টর একসঙ্গে কাজ করে। সেগুলো সকলের সমন্বয়ে না হলে সময় মতো কার্যকর ফল পাওয়া যায় না। আমাদের অর্থনীতিতে গতিশীলতা এসেছে মূলত নব্বইয়ের দশক থেকে। এর আগে দেশ পুনগর্ঠন, প্রচুর পরিমাণ ঋণ, সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে একটা ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়। সব আয়োজনের রিটার্ন আসা শুরু হয় নব্বইয়ের দশক থেকে।
তিনি বলেন, নব্বইয়ের দশক থেকে আমাদের রাজনৈতিক সরকারগুলো যে সমস্ত অর্থনৈতিক কর্মসূচি নিয়েছিল, তা ফলপ্রসু ছিল বলেই এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছি। প্রত্যাশা করছি, এসডিজিতেও আমরা অনেক ভালো করব। তিনি আরও বলেন, আমাদের একধাপ অগ্রগতি হলো। এই অগ্রগতিতে কমবেশি সবারই অবদান আছে।
তিনি আরও বলেন, এই উন্নয়ন-অগ্রগতি আরও বেশি হতে পারে। তবে উন্নয়নশীল স্বীকৃতির সঙ্গে সঙ্গে কিছু শর্তও দিয়েছে কর্তৃপক্ষ তা ধরে রাখতে হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীল থাকতে হবে। জীবন মানের উন্নতি যদি স্থিতিশীল না থাকে বা এখানে যদি বৈষম্য বেড়ে যায়, অনিয়ম-দুর্নীতি বৃদ্ধি, সুশাসনের অভাব হয় তাহলে এই উন্নয়ন ধরে রাখা বা এর পরের স্টেজে যাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ে। এই সাফল্য অতীতে ভালো কাজের তবে টিকে থাকবে যদি বর্তমানে ভালো করতে পারি।