রোহিঙ্গা মায়েদের স্থানে নিজেকে কল্পনা করলে শিউরে উঠি : কেট ব্লানচেট
আসিফুজ্জামান পৃথিল : জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক সংস্থার বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন অস্কার বিজয়ী হলিউড অভিনেত্রী কেট ব্লানচেট। বাংলাদেশ থেকে ফিরে তিনি মুখোমুখি হয়েছিলেন বিখ্যাত টিভি উপস্থাপক ক্রিশ্চিয়ান আমানপোরের। সেখানে তিনি রোহিঙ্গা বিশেষত রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের বিভৎস অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন। আগামী বর্ষায় রোহিঙ্গা শিবিরে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি। একই সাথে সল্প সামর্থ্য সত্বেও বাংলাদেশের জনসাধারণের নিস্বার্থ এগিয়ে আসার প্রশংসা ঝড়ে তার কণ্ঠে। সেই সাথে তিনি নোবেল সহ নানান মানবাধিকার পুরষ্কার পাওয়া অং সান সুচির নিস্পৃহতার তীব্র সমালোলোচনা করেন।
ব্লানচেট মনে করেন রোহিঙ্গাদের এই মুহুর্তে সর্বাধিক প্রয়োজন শরনার্থী শিবিরের পরিবেশের উন্নয়ন ঘটানো। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অর্ধেকই শিশু হওয়ায় তাদের মন থেকে আতঙ্ক কাটানো জরুরী বলে মনে করেন তিনি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ শুধুমাত্র পৃথিবীর সর্বধিক বর্ষাবহুল দেশই নয়, একই সাথে এটি পৃথিবীর অন্যতম দারিদ্রপিড়ীত দেশও বটে। তবুও বাংলাদেশের মানুষ যে বিশাল হৃদয়ের পরিচয় দিয়েছে তা নজিনবিহীন। বাংলাদেশ নিজেদের সীমান্ত খোলা রাখার মতো সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। বাংলাদেশ পৃথিবীর সকল দেশের উদাহরণ হতেই পারে’।
রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরতে চাইলেও সেখানে ফিরতে তারা তীব্র আতঙ্ক বোধ করছে বলে জানান কেট ব্লাঙ্কচেট। বর্তমান পরিস্থিতির রাজনৈতিক সম্ধান ছাড়া রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরানো মুশকিল বলে মন্তব্য করেন তিনি। এই প্রসঙ্গে এই চার সন্তানের জননী বলেন, ‘রোহিঙ্গারা ফিরতে ভয় পাচ্ছে। আমি তাদের চোখেমুখে আতঙ্ক দেখেছি। তাদের বাড়িঘর জ্বালয়ে দেয়া হচ্ছে। চোখের সামনে স্বজনদের হত্যা করা হয়েছে। জেসমিন নামে এক রোহিঙ্গা নারীর সাথে আমার কথা হয়। সে আমাকে জানিয়েছে তার চোখের সামনে তার ৩ ভাইকে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। এক ভাইকে কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। একজন মা হিসেবে আমি কোনদিন আমার সন্তাদের এই নরকে নিয়ে ফেরত যেতাম না’।
বাংলাদেশে এসেই রোহিঙ্গা শিশুরা প্রথমবার স্কুলে যেতে পেরেছে। মায়নমারে তাদের স্কুলে যেতে দেয়া হতোনা। রাষ্ট্রহীন এই মানুষগুলোকে অসীম মমতা দেখানোয় তিনি বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘সমস্থ পশ্চিমের হৃদয় এক করলেও কোন বাংলাদেশীর অর্ধেক হৃদয়ের সমান হবেনা’। তিনি আন্তর্যাতিক সম্প্রদায়কে অনুরোধ করেন বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য।
তিনি মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলার অং সান সুচির নিস্পৃহতার কারণে বিষ্ময় প্রকাশ করেন। সারা বিশ্বে সুচির নানান মানবাধিকার পদক ফেরত নেয়াকে তিনি ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেন। তিনি যখন বাংলাদেশ সফর করছিলেন সুচি তখন তার নিজের দেশ অস্ট্রেলিয়া সফরে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি অস্ট্রেলিয়া সরকারকে অনুরোধ করেন সুচিকে চাপ দেবার জন্য। তিনি মনে করেন সুচির নোবেল প্রত্যাহারের জন্য জনমত গড়ে তোলা উচিত। – সিএনএন