নির্বাচন ঘিরে জোটের হিসাব কষছে প্রধান দলগুলো
হুমায়ুন কবির খোকন : আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে নানা হিসাব নিকেশ। অবশ্য আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবন্দীর বিষয়টি। আওয়ামী লীগ মনে করছে. খালেদা জিয়া বন্দী থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি । এ বিষয়ে একাধিক বক্তব্যও দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আর পর পর দুইবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপির নিবন্ধন বাতিলের শঙ্কা রয়েছে। তবে খালেদা জিয়ার মুক্তির ওপর নির্ভর করছে নির্বাচনে দলটি অংশ নেবে কি নেবে না, জানিয়েছে বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র। সম্প্রতি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ প্রশ্নে বিএনপি নেতা রিজভী উত্থাপিত ৪টি শর্তের মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে খালেদা জিয়ার কারামুক্তি।
জাতীয় পার্টি চাচ্ছে আগামী নির্বাচনে চমক দেখাতে। তারা আশা করছে, বিএনপি কোনো কারণে নির্বাচনে না এলে ৩শ আসনেই প্রার্থী দেবে। আর বিএনপি এলে জাপা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েই নির্বাচন করতে পারে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আশা করছি সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে। আগামী নির্বাচন হবে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। এসব বিষয়ে সরকারকে আগে ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। বিএনপির ২০ দলীয় জোট প্রার্থীর তালিকা প্রস্তুত রয়েছে, চেয়ারপারসনের মুক্তিই এখন চূড়ান্ত বিষয় ।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, অবশ্যই আসছে সংসদ নির্বাচনে আমরা অংশ নেব। ৩০০ আসনেই দলের প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে । তবে জোটবদ্ধ হয়ে অংশ নেব না কি এককভাবে অংশ নেব-সে বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জাতীয় পার্টির নেতা মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বিএনপি এবারও নির্বাচনে না এলে জাতীয় পার্টি ২০১৪ সালের মতো সমঝোতা করে কিছু আসনে ভোট করবে না। তবে চুন্নুর ধারণা এবার আর বিএনপি ভোট বর্জন করবে না। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এসে উপায় নেই। বিএনপি-জামায়াতের বর্জনের মুখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি ভোট পায় ১১.৩১ শতাংশ।
সূত্রমতে, ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি বাতিল হওয়া নির্বাচনের আগে বামপন্থীদের জোট ১৪ দল, জাতীয় পার্টি, বিএনপি ভেঙে বের হয়ে আসা এলডিপি নিয়ে মহাজোট করে আওয়ামী লীগ। পরে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে এলডিপিকে বাদ দিয়ে মহাজোট নির্বাচনে জয় পায়। আওয়ামী লীগ ভোট পায় ৪৯ শতাংশ, আসন পায় ২৩০টি। বিএনপি ভোট পায় ৩৩ শতাংশ, আসন পায় ৩০টি।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ৩৫টির মতো আসনে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। আর কয়েকটি আসন দুই দলের জন্যই উন্মুক্ত রাখা হয়। জাতীয় পার্টির সূত্র জানায়, এবার তারা একত্রে নির্বাচন করলে নবম সংসদ নির্বাচনে যে কয়টি আসনে জোটের মনোনয়ন পেয়েছিল, এবার তার চেয়ে বেশি আসন চাইবে।
তবে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, জাতীয় পার্টিকে রংপুর বিভাগে বেশি ছাড় দেওয়া হবে। এর বাইরে বগুড়ায় এক বা একাধিক, রাজশাহী বিভাগে দুই বা তিনটি, কিশোরগঞ্জে একটি, ঢাকায় এক বা দুটি, নারায়ণগঞ্জে একটি, সিলেট বিভাগে একাধিক, চট্টগ্রামে একটি বা দুটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি, কুমিল্লায় এক বা একাধিক, খুলনা বিভাগে একাধিক, ময়মনসিংহে দুই বা তিনটি, টাঙ্গাইলে একটি আসনে ছাড় দেওয়া হতে পারে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর একজন সদস্য বলেন, যেসব আসনে এখন জাতীয় পার্টির সাংসদ আছেন, তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে, এটা অনেকটা নিশ্চিত। তবে দুই এক জনের ভাগ্য পুড়তে পারে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক দরকষাকষি হবে বলেও জানান আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড.হাছান মাহমুদ বলেন, জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির আসন বন্টন ও সমঝোতার বিষয়টি নির্ভর করছে দলের সভানেত্রীর ওপর।
২০০৮ সালে জোটবদ্ধ হয়ে ভোট করে জাতীয় পার্টি ২৭ আসনে জিতে আওয়ামী লীগ সরকারেরও অংশীদার হয়। তবে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তবে দলের ভাইস চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেন। পরে অনেক নাটকীয়তার পর রংপুর-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর শপথ নেন এরশাদ। পরে এরশাদকে মন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত করা হয়। রওশন এরশাদ বিরোধী দলের নেতা এবং জাতীয় পার্টির কয়েকজন নেতা মন্ত্রী হন।