নির্বাচনকে সামনে রেখে দিল্লিমুখী রাজনীতিবিদরা
সাইফুল ইসলাম ও হাসিব বিল্লাহ : আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল ভারত সফর শেষে দেশে ফিরেছেন চলতি সপ্তাহে। ব্যক্তিগত সফরের কথা বলে কর্নেল অলি আহমদ ভারত সফরে রয়েছেন। জন্মদিনে টুইট বার্তায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছার পর তিনি ভারতে গেছেন। গত বছরের মাঝামাঝিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তিন মাসের ব্যবধানে দুইবার ভারত সফর করেছেন। জানা গেছে, বিএনপির ও জাতীয় পার্টি একটি প্রতিনিধি দল দ্রুততম সময়ে ভারত সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সংসদ নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের ভারত সফরে যাওয়া নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটের আগে রাজনৈতিকদের ভারত যাওয়ার এ প্রবণতা প্রমাণ করে বাংলাদেশের নির্বাচনে দেশটির প্রভাব রয়েছে।
এ বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের প্রথম ভাগে দেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। আর বিএনপির অভিযোগ, বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দেশের দুই বড় রাজনৈদিক দল নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা নিয়ে সহমতে পৌঁছাতে পারছে না। নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনীতিতে একটা জটিল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। ঠিক এমন অবস্থায় বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের ঘন ঘন ভারত সফর করতে দেখা যাচ্ছে। গত ১৭ মার্চ শনিবার ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। যার নেতৃত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের আমন্ত্রণে নয়া নয়াদিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ইনডোর স্টেডিয়ামে দুদিনব্যাপী ৮৪তম প্লানারি সেশনে যোগ দেন আওয়ামী লীগের এই প্রতিনিধি দল। আব্দুর রাজ্জাক ছাড়া প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মণি এবং দলের উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন তারা।
বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতির ও ২০ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ গত ১৮ মার্চ ১৫ দিনের সফরে ভারত গেছেন। গত ১৪ মার্চ ছিল অলি আহমদের ৮০তম জন্মদিন। এদিন তাকে শুভেচ্ছা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার ব্যক্তিগত ই-মেইলে এ শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান। শুভেচ্ছার জবাবে অলি আহমদ ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাতের আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর পরপরই কর্নেল অলির ভারত সফর রাজনৈতিক অঙ্গনে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। তবে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ব্যক্তিগত সফরে কর্নেল অলি ভারত গেছেন।
গত বছরের জুলাইয়ে পাঁচ দিনের সফরে গিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি ব্যক্তিগত সফরে গেলেও ভারতের কয়েকজন মন্ত্রী ও সরকারি উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে তার সাক্ষাতের খবর প্রকাশিত হয়েছিল গণমাধ্যমে। তিন মাসের ব্যবধানে দুইবার ভারত সফর করেন এরশাদ।
জানা গেছে, বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল ভারত সফরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এ বিষয়ে এখনো মুখ খুলতে চাননি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ভারত সফরে গিয়ে কী মন্ত্র নিয়ে এসেছে তা আমাদের জানা নেই।
ভারত সফরের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে কংগ্রেসের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই তাদের দাওয়াতে ভারত সফরে গিয়েছিলাম। আমরা তো নিজে থেকেই যাইনি। তাই এ সফর নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের ভারত সফরের বিষয়টিকে স্পর্শকাতর মন্তব্য করে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। আর দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় বলেন, দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কেউ ভারতে গেলে দোষের কি আছে?
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচনে বেশ আগে থেকে ভারতের একটা প্রভাব আছে। আগামী নির্বাচনও তার বাইরে নয়। নির্বাচনের আগে দেশের রাজনৈতিকদের ভারতে যাওয়ার প্রবণতা দেশের জন্য শুভ নয়। বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারত প্রভাব বিস্তারে নেপথ্যে বাণিজ্য থেকে শুরু করে দক্ষিণ এশীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের একটা কৌশল বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, রাজনীতিবিদদের ভোটের আগে ভারত যাওয়ার যে প্রবণতা দেশের ভোটারদের অবহেলা করা ছাড়া আর কিছুই নয়।