মহান স্বাধীনতা দিবস কাল
আবুল বাশার নূরু : মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস কাল। বাঙালীর দীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলনের চূড়ান্ত লড়াইয়ের সূচনাকাল। বিশ্বের বুকে লাল সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন এটি। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালী। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্রযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল এদেশের মানুষ। ইতিহাসের পৃষ্ঠা রক্তে রাঙিয়ে, আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে একাত্তরের এই দিনে যে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ দেশের মানুষ; দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন তার চূড়ান্ত পরিণতি। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনার সেই গৌরব ও অহঙ্কারের দিন। প্রতিবছর মহান স্বাধীনতা দিবস জাতির জীবনের প্রেরণায় উজ্জীবিত হওয়ার নতুন বার্তা নিয়ে আসে। এ বছর স্বাধীনতা দিবসের আগ মূহুর্তে ন্বল্পোন্নত দেশে থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ।
একাত্তরের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। শত্রুসেনাকে বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করার বঙ্গবন্ধুর ডাকে জীবনপণ সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীর বাঙালী। দীর্ঘ ন’মাস এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম অর্জন; মহান স্বাধীনতা।
কাল ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই বাঙালী জাতির জীবনে সূচনা ঘটবে আরও একটি ঝলমল উৎসব দিনের। রক্ত, অশ্রুস্নাত, বিক্ষুব্ধ বিদ্রোহের দিন ২৬ মার্চ। এ ভূভাগের সবচেয়ে বড় অর্জন, বাঙালীর সহ¯্র বছরের জীবন কাঁপানো ইতিহাস; মহান স্বাধীনতা।
স্বাধীনতার ৪৭ বছর পূর্তিতে এবার সত্যিই এক ভিন্ন আবহে, প্রেক্ষাপটে জাতির সামনে এসেছে স্বাধীনতা দিবস। দীর্ঘ চার দশকের দাবি পূরণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, বড় বড় কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীকে ঝুলতে হয়েছে ফাঁসির দড়িতে। বিজয়ের ৪৬ বছর পর উন্নয়নশীল দেশের মর্যদা পেয়েছে বাংলাদেশ।
যাদের রক্ত ও সম্ভ্রমের মূল্যে আমরা পেয়েছি মহামূল্যবান এই স্বাধীনতা, তাদের কাছে মহামূল্য ঋণ গভীর কৃতজ্ঞতা, ভালবাসা ও বিন¤্র শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করার দিন কাল। মহান স্বাধীনতা দিবসে জাতি আজ উৎসবের পাশাপাশি গভীর শ্রদ্ধা, ভালবাসা আর বেদনায় স্মরণ করবে মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদকে। স্বরণ করবে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী তার সহকর্মী জাতীয় নেতাদের। জাতি শ্রদ্ধা জানাবে বীরাঙ্গনা আর শহীদমাতাদের। দৃপ্ত শপথ নেবে জঙ্গী-সন্ত্রাস ও যুদ্ধাপরাধীমুক্ত সোনার বাংলা বিনির্মাণে। স্বাধীনতাবিরোধী শত্রুর সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার।
সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে মহান এ দিবসটি পালন করা হবে। সব ভবনে ও শহরের প্রধান প্রধান সড়কে উড়বে রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা। সকালে ফুলে ফুলে ভরে উঠবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে দলমতনির্বিশেষে সেখানে হাজির হবে লাখো মানুষ। ভোরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক অর্পণের পরই সাধারণের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কাল সরকারী ছুটির দিন।