ব্যাংক ঋণ, প্রবৃদ্ধি ও বেকারত্বে বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি ভারত
বিশ্বজিৎ দত্ত : ব্যাংকের ঋণ, প্রবৃদ্ধি ও বেকারত্ব অর্থনীতির এই ৩ মাধ্যমে একই ধারায় চলছে বাংলাদেশ ও ভারত। এটাকে বলা যেতে পারে কাকতলীয় মিল। ভারতের সঙ্গে পরিসংখ্যানে মিল হবে না কিন্তু ভাবগত ঐক্যে যেন একে অপরের প্রতিচ্ছবি।মোদী সরকার গত মঙ্গলবার ২লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের ঋণ খাতা( রাইট অফ) থেকে মুছে দিয়েছে।এটি এই সরকারের সাড়ে তিন বছরে নেয়া বিভিন্ন ব্যাক্তির ঋণ। কারা এই টাকা নিয়েছিলেন এ নিয়ে সংসদে পশ্চিম বঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা মুখার্জ্জী সরব হলেও অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলছেন, আইনে নেই তাই নাম প্রকাশ করা যাবে না। একই সঙ্গে ভারতের সংসদে বলা হয়েছে মোদি জামানায় ঋণ খেলাপী বৃদ্ধি পয়েছে ৩ গুণ। বর্তমানে ভারতে স্বেচ্ছা ঋণ খেলাপীর সংখ্যা ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা অন্যদিকে বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের ৯ বছরে খাতা থেকে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের ঋণ মুছে ফেলা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। আর ৯ বছরে খেলাপী ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ গুণ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে খেলাপী ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা । ২০১৮তে খেলাপী ঋণ হয়েছে ৮০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।ভারতেরকেন্দ্রীয় ব্যাংকের চরিত্রের সঙ্গেও বাংলাদেশ ব্যাংকের চরিত্রের মিল রয়েছে অনেকাংশেই। ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ছিলেন ড. রঘুরাম রাজন একজন অর্থনীতিবিদ। তার সঙ্গে ভারতের অর্থমন্ত্রণালয়ের টানপোড়েন ছিল। যেমন সরকারের হাতে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার পক্ষে ছিলেন তিনি।যেমনিভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান ছিলেন। রঘুরাম রাজন ছিলেন স্পষ্টভাষী, মিডিয়াতে কার্যক্রম তুলে ধরার পক্ষে। ড. আতিউরও তেমনি ছিলেন। বর্তমান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির সাবেক আমলা। তেমনি ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর উর্জিত প্যাটেল সাবেক আমলা। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরপরই ভারতের প্রবৃদ্ধির হার ৫এর ঘর ছেড়ে ঊর্দ্ধমূখী হয়ে এখন ৭ দশমিক ১২এর ঘরে পৌঁছেছে। তেমনিভাবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিও হাসিনা সরকারের ৯ বছরে ৫ থেকে ছাড়িয়ে ৭ দশমিক ২৮ হয়েছে। ভারতর মতোই প্রবৃদ্ধি বাড়লেও বেকারত্ব কমেনি। ভারতের বর্তমান বেকারত্বের হার ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৮ দশমিক ৮শতাংশ হয়েছে।বাংলাদেশেও ভাল প্রবৃদ্ধি হওয়ার পরেও গতবছরে বেকারত্ব বৃদ্ধি পয়েছে।২০১৬ সালের ২৫ লাখ ৯০ হাজার বেকার বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৭ সালে হয়েছে ২৬ লাখ ৭৭ হাজার।
প্রবৃদ্ধি বেশি হলেও বেকারত্ব না কমার বিষয়ে ভারতের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পণ্য উৎপাদন নির্ভর শিল্পের বিকাশে ভারতের প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়নি হয়েছে সেবা খাতের বিকাশে। ফলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়নি। এই প্রবৃদ্ধিতে কিছু শিল্পপতির লাভ হলেও সার্বিক শিল্পের লাভ হয়নি।
বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ এবি মির্জা আজিজুল ইসলামও মনে করেন, ভাল প্রবৃদ্ধির পরেও ভারতে যে কারণে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। একই কারণে বাংলাদেশেও বেকারত্ব বেড়েছে। সম্পাদনা : হুমায়ুন কবির খোকন