নগরীজুড়ে বিক্ষোভ-অবরোধ কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাবির সঙ্গি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
মাসুদ আলম, সুশান্ত সাহা, মোরশেদ মুকুল, রুহুল আমিন ও জুবায়ের সানি : সরকারের আশ্বাসে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে ক্লাস বর্জন করে গতকাল দিনভর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল রোকেয়া হলের সামনে দিয়ে টিএসসি হয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। গতকালই কোটা সংস্কারের আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা যানচলাচল বন্ধ থাকায় অচল হয়ে পড়ে রাজধানী। রাত সোয়া আটটার দিকে আন্দোলনকারীরা গতকালের জন্য কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
সরজমিনে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ করতে থাকে। এসময় শাহবাগ,টিএসসিসহ আশপাশে এলাকায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সকালে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনকারী সংগঠন ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’- এর কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা বিক্ষোভ মিছিল না করার অনুরোধ জানান। এসময় অর্থ মন্ত্রী ও কৃষি মন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবী জানান। বক্তব্য প্রত্যাহার না করায় বিকেলে সমন্বিতভাবে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। রাত সোয়া ৮টায় গতকালের জন্য কর্মসূচির সপ্তাতি ঘোষণা করেন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
সোমবার সচিবালয়ে বৈঠকের পর দু’টি ভাবে বিভক্ত হয়ে যায় আন্দোলনকারীরা। সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে টিএসসিতে আসতে থাকে শিক্ষার্থীরা। শ্লোগানে কেঁপে উঠে টিএসসি। রাতে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর কুশপত্তলিকা দাহ করে শিক্ষার্থীরা।
বেলা ১১টায় রামপুরা ব্রিজের কাছে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, বসুন্ধরা গেটের সামনে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, এআইইউবি এবং বাঁশতলা ইউআইটিএস ও ধানমন্ডিতে ড্যাফডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে দুপুর পর্যন্ত বিক্ষোভ করে। এতে ওই এলাকায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে আন্দোলনস্থল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। বিকেলে রাজু ভাস্কুর্যের সামনে ধানমন্ডি থানার এএসআই তাইফুল ইসলামকে মারধর করে শিক্ষার্থীরা। তার মোটরসাইকেলও ভাংচুর করা হয়। এমনকি অপরিচিত কাউকে দেখলেও তার পরিচয় জানতে যাওয়া হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, মে মাসে রোজা শুরু হয়ে যাবে এবং শিক্ষার্থীরা ছুটিতে চলে যাবে। এখন আন্দোলন থামিয়ে দিলে তখন আর নতুন করে শুরু করা যাবে না। তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। সাত দিনের মধ্যে তাদের পাঁচ দফা দাবি মানতে হবে। এ ছাড়া তিন দিনের মধ্যে দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে এমন কথা লিখিতভাবে জানাতে হবে, তাহলে আন্দোলন থেকে সরে আসবেন তারা । এ সময়ে সারা দেশের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বর্জন অব্যাহত থাকবে। অর্থ মন্ত্রী ও কৃষি মন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে।
বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, সোমবার আমরা সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত থাকবে। ি
কন্তু একইদিন সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ অধিবেশনে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদেরসহ ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে রাজাকারের বাচ্চা বলে গালি দিয়েছেন। আমরা এ বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য মঙ্গলবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কোনও বক্তব্য দেননি। আবার অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন আগামী বাজেটের আগে কোটা সংস্কার করা হবে না। তাই আমাদের আন্দোলন চলবে। এ সময়ের মধ্যে সব ধরনের আন্দোলন বন্ধ থাকবে এবং ক্লাস-পরীক্ষা চলবে। আটকদের মুুক্তি দিতে হবে। আহতদের চিকিৎসা করাতে হবে।