আওয়ামী রাজনীতিতে মহানগরে সমন্বয়হীনতা
রবিউল আলম
রাজনীতির কিছু স্বর্ণযুগ আছে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলেই কিছু সুসময় আসে, তা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে দল ক্ষমতায় আসে এবং ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে ক্ষমতা ধরে রাখা যায়। রাজনৈতিক দলসমূহের নগর, মহানগর কমিটিগুলো দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মুসলিম লীগের ঢাকার দায়িত্ব পালন করেছেন খাজা পরিবার। আওয়ামীলীগের প্রথম দায়িত্ব পালন করেন হাফেজ মুজা, রফিক শেঠ, কালু শেঠরা। পরে অনেকেই দায়িত্ব পালন করেছেন, তবে মরহুম হানিফ ও মায়ার কমিটি ছিল মহানগর আওয়ামীলীগের শ্রেষ্ঠ কমিটি। ঢাকা মহানগর উজ্জীবিত হওয়ায় ১৯৯৪ সালের মেয়র নির্বাচন ছিল আওয়ামীলীগের ক্ষমতায় আসার টার্নিং পয়েন্ট। আমরা ৯৪ সালে মেয়র নির্বাচনকে ছোটখাট গণবিপ্লব বলতে পারি। ব্যারিষ্টার আবুল হাসনাত থেকে মহানগর বিএনপি’র দায়িত্ব মির্জা আব্বাসকে অর্পণ করায় সাদেক হোসেন খোকার গ্রুপ বিদ্রোহ করলে বিএনপি’র রাজনৈতিক ঐক্য ভেঙ্গে পরে। অপদিকে তারেকের রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত কার্যক্রমও বিএনপিকে জনবিচ্ছিন্ন করে দেয়। মেয়র হানিফ মৃত্যুর পরে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দুই ভাগ হওয়াতে ঢাকা মহানগর আওয়ামীলীগও দুই ভাগ করে নগর কমিটি গঠণ করে। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামীলীগের দায়িত্ব দেয়া হয় এ,কে,এম, রহমত উল্লাহ এমপি ও আলহাজ্ব মো. সাদেক খানকে। পরিপূর্ণ শতভাগ শুদ্ধ না হলেও অনেক চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে উত্তরে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটির দায়িত্ব পালন করেছেন প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার এমপিসহ মহানগরের জনপ্রতিনিধিগণ। এত বড় রাজনৈতিক দলে শতভাগ শুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিছু বিতর্ক থাকবেই। তবে কমিটি সম্পন্ন করতে পারায় সকলের সন্তুষ্টি অর্জিত হয়েছে। ঢাকা উত্তরে কিছু রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে আগে এবং দক্ষিনের প্রতিটি ওয়ার্ডের নেতার মতামত প্রদানের সুযোগ করা হয়েছিল যেটা আগে ছিল না। উত্তর আওয়ামীলীগ এখন অনেক উজ্জীবিত, সভানেত্রীর উপস্থিতিতে শেখ হাসিনা উত্তর স্লোগানে মুখরিত। ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামীলীগ প্রশ্নবিদ্ধ, নেতৃত্বে দ্বন্দ, চতুর্মূখী মতপার্থক্য, একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মায়া-হানিফের অনুসারীদের কোনঠাসা করতে গিয়ে নিজেরাই কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। ঢাকার নেতা ঢাকায় খুঁজে আবিস্কার করেছেন আবুল হাসনাতকে। অত্যন্ত সহজ সরল, অতি ভদ্রলোককে সভাপতি করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু তিনি সভাপতির দায়িত্ব ও কর্তব্য কোনদিন পালন করতে পারেন নাই, পালন করতে দেয়া হয় নাই। শারীরিক অসুস্থ্যতার জন্যও হয় নাই। কারা এই বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন তদন্তের প্রয়োজন। অপরদিকে কাউন্সিলরদের সাথে মহানগর আওয়ামীলীগের ঐক্যের কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নাই বললেই চলে। কাউন্সিলরদের সাথে, এমপিদের সাথে ঐক্য উত্তর ও দক্ষিনের কারো সাথেই নাই। কমিটি ঘোষণার পরে এমপিরা আতংকে আছেন মনোনয়ন নিয়ে। উত্তরের মেয়র দক্ষিনের সভাপতির মত অতি ভদ্রলোকগণ ও কাউন্সিলরগণ ওয়ার্ড কমিটির সাথে অর্থনৈতিক দ্বন্দে জড়িয়ে পড়েছেন। এমপিরা লোক সৃষ্টি করে নিজ নিজ গ্রুপ করছেন। যেভাবেই হোক ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে মহানগর আওয়ামীলীগ, কাউন্সিলর, এমপি, মেয়র সকলকেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নেতাদের গোড়ামি, এমপিদের ভাড়ামি, কাউন্সিলরদের তেড়ামি, মেয়রদের মান-অভিমান ভাংতে হবে। না হলে জনগণই এর সঠিক উত্তর আগামী নির্বাচনে দেখিয়ে দিবে। মনে হয় সেই আশায় থাকা আমাদের ঠিক হবে না।
লেখক : ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ