অভিমত জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সম্পূর্ণ কোটা বাতিল সংবিধান পরিপন্থী
এস এম নূর মোহাম্মদ : সম্পূর্ণ কোটা বাতিল করা সংবিধান পরিপন্থী হবে বলে অভিমত দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা। কোন কোটাই থাকবেনা গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের বিষয়ে আইনজীবীরা বলেন, কোটা সংস্কার করতে হবে। কিন্তু সম্পূর্ণ বাতিল করা যাবে না। এটা সংবিধান পরিপন্থী হবে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন বলেন, আন্দোলনকারীদের যুক্তিপূর্ণ দাবি মেনে নিলেতো আর সমস্যা নেই। আমরাও সংস্কার চাই। আর সম্পূর্ণ বাতিল করা শিক্ষার্থীদের দাবি ছিলনা। তিনি বলেন, কোটাই থাকবেনা এমন বক্তব্য আরও একটি সমস্যার সৃষ্টি করবে। বিশেষ শ্রেণীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থার কথা সংবিধানে বলা আছে। তবে সরকার করতে পারে, নাও পারে। করতেই হবে এমনটা বলা নেই। তবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদেরও কিছু থাকা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সংসদে বক্তব্যে লাভ নেই। গেজেট করতে হবে। সংবিধানে বলা আছে অনগ্রসর যারা আছে, তাদের জন্য একটা কোটা নির্ধারণ করা। সম্পূর্ণভাবে কোটা বাতিল করলে এটা সংবিধান পরিপন্থী হবে। আমরা চাই কোটা থাকবে, তবে সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন সেটা রাগের কথা। দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরির জন্য এটা বলেছেন। এতে মুক্তিযোদ্ধারা, মহিলারা মাঠে নামবে। এটা নিয়ে মারা-মারি হবে। আর আন্দোলনকারীরাও কোটা প্রথা বতিলের জন্য বলেনি। তারা যৌক্তিক সংস্কার চেয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের কথা সংবিধানে বলা নেই। তবে যেহেতু তাদের দেওয়া হয়েছে, সেক্ষেত্রে তাদের ছেলে-মেয়ে পর্যন্ত দেয়া যেতে পারে। কিন্তু নাতি পর্যন্ত দেওয়া ঠিক হবেনা। এতে মেধা শূণ্য হয়ে যাবে। বরং সরকার কমিশন করে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নতুন করে কোটা প্রথা নির্ধারণ করতে পারে। হঠাৎ করে এটা হয়না।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, কেউতো কোটা উঠিয়ে দিতে বলেনি। প্রধানমন্ত্রী রাগ করে এটা বলেছেন। কোটা রাখতে হবে। সংবিধানে বলা আছে কোটা থাকবে। সম্পূর্ণ উঠিয়ে দিলে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। এতে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। তবে যে ৫৬ শতাংশ দেওয়া আছে সেখানে সঠিকভাবে নিয়োগ হচ্ছেনা। অন্য জায়গা থেকে নিয়োগ করা হচ্ছে। তাই কোটা সম্পূর্ণ বাতিল না করে কমিয়ে আনার কথা বলেন তিনি।
ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, কোটা সংস্কার হওয়া দরকার। তবে যখন আইন করবে তখন নিশ্চয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিবে। এখনই বলা যাচ্ছে না সেটা কিভাবে হবে। প্রজ্ঞাপন হলে তখন বিষয়টি পরীক্ষা-নিরিক্ষা করা হবে। কিন্তু সংবিধান লঙ্ঘন করে কোন কিছু করা যাবেনা। তাহলে সংক্ষুব্ধরা রিট করতে পারবে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৮(৪) এ বলা আছে, নারী বা শিশুদের অনুকুলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন করতে কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করবেনা। অনুচ্ছেদ ২৯ এর ৩ (ক) এ বলা আছে, নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাঁহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান-প্রণয়ন করা হইতে, রাষ্ট্রকে নিবৃত্তি করিবে না।